Help Bangla

Blogs in Bangali

ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লব এর গুরুত্ব আলোচনা কর

ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লব এর গুরুত্ব আলোচনা কর।

বিদ্র : যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রশ্ন লিখে তার পাশে লিখে দাও helpbangla । সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে 

বিদ্র : search : ভার্সাই চুক্তি কি প্রকৃতই কঠোর ছিল? bangalinews পাশে লিখতে হবে bangalinews

১। ইংল্যান্ডে শক্তিশালী রাজতন্ত্র হিসেবে টিউডর রাজবংশের উদ্ভব

ঘোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ইউরোপের ইতিহাসে অন্যতম যুগান্তকারী

ঘটনা। এই সব শক্তিশালী রাজতন্ত্রের মধ্যে ইংল্যান্ডে টিউডর, ফ্রান্সে বুঝলো, অস্ট্রিয়ায়

হ্রাপসবার্গ, রাশিয়ায় রোমানভ এবং তুরস্কে ওসমানিয়া রাজবংশের উদ্ভব হয়। এতে রাজা

গোপের বদলে জাগতিক এবং পারলৌকিক উভয় জগতের সর্বেসর্বা হয়ে উঠে।

ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড এই ক্ষুদ্র চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে ইংল্যান্ড দ্বীপুঞ্জ

গঠিত হয়। টিউডরদের ইংরেজ সংস্কৃতি এ্যাংলো-স্যাক্সন ও নরম্যান ফরাসি এই দুই সংস্কৃতির

সামঞ্জস্যতায় গড়ে উঠেছিলো। ইংল্যান্ডের রাজা রান্নাসী বংশোদ্ভূত হওয়ায় তারা সমগ্র দেশ

জয় করতে ইচম্বুক হয়ে উঠেন। তারা আয়ারল্যান্ডে এবং এখোলসে ইংল্যান্ডের আধিপত্য

প্রতিষ্ঠা করলেও স্কটল্যান্ডে তা পারেনি । ফ্রান্স ছিলো ঐতিহ্যগতভাবে শত্রুভাবাপন্ন দেশ এবং

দীর্ঘ একশত বছর (১৩৩৭ ১৪৫৩খ্রি.) এরা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। ১৩৯৯

– ১৪৮৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো।

বলা যায় দ্বিতীয় রিচার্ডের পতন থেকে শুরু করে ১৪৮৫ সালে তৃতীয় রিচার্ডের মৃত্যু পর্যন্ত এই দেশ যুদ্ধে বিধস্ত হয়। তৃতীয় এডোয়ার্ডের বংশধরদের উত্তারাধিকার দ্বন্দ্ব সংঘাতের ফল স্বরূপ “গোলাপ যুদ্ধের সূর হয়। দুটো দলের এক পক্ষে ছিলো ইয়র্কশায়ারবাদীরা (সাদা গোলাপ) এবং অন্যপক্ষে ল্যাংকাশায়ারবাদীগণ (লাল গোলাপ)। এরা দীর্ঘ ত্রিশবছর একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই গৃহযুদ্ধের শেষে রাজা সপ্তম হেনরি চতুর্থ এডোওয়ার্ডের বোনকে বিয়ে করেন এবং ১৪৮৫ সালে বসওয়ার্থের যুদ্ধে তৃতীয় রিচার্জকে পরাজিত করেন। রিচার্জ যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হলে সপ্তম হেনরি সিংহাসনে বসেন। তিনি ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক সকল অনৈকা ও অশান্তি দূর করে ইউরোপে একটি শক্তিশালী রাজতন্ত্রের সূচনা ঘটান 

২। সপ্তম হেনরি (১৪৮৫ ১৫০৯ খ্রিঃ)

সপ্তম হেনরি টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৪৭১ সালে ওয়েলস-এর রাজকুমারের

মৃত্যুর পর তিনি ল্যাংকাস্টারিয়ান গোষ্ঠিভূক্ত সম্প্রদায়ের রাজা মনোনীত হন। ইংল্যান্ডের রাজ সিংহাসন লাভের ক্ষেত্রে হেনরির প্রধান ভিত্তি হয়ে দাড়ায় ১৪৮৫ সালে বসওয়ার্থের যুদ্ধে তাঁর বিজয়। এই যুদ্ধে তৃতীয় রিচার্ড মারা যান এবং হেনার সপ্তম হেনরি উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি চতুর্থ এডওয়ার্ডের কন্যা লেডি এলিজাবেথকে বিয়ে করেন।

দীর্ঘদিন গোলাপ যুদ্ধের ফলে ইংরেজ জাতির মনে দৃঢ় রাজতন্ত্রের শাসনাধীনে আমার ইচ্ছা

প্রবল হয়ে হেনরি একজন শক্তিশালী শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা

করেন, এবং এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সাফল্যমন্ডিত হয়েছিলেন।

গোলাপযুদ্ধে ল্যাংকাস্টার এবং ইয়র্কশায়ার উভ্যাগোষ্ঠীর অভিজাত ও সামন্তশ্রেণী প্রত্যক্ষভাবে

অংশ নেয়। ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধে বহু অভিজাত পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন। তাঁর অভ্যন্তরীণ

নীতি দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রে পরিচালিত

হয়েছিলো। তিনি অভিজাত শ্রেণীর ক্ষমতা ধর্বে তিনটি নীতি গ্রহণ করেন।

4/37

প্রথমত, গোলাপ যুদ্ধের পর ১৪৮৭ সালে এক আইনে বলা হয় যে অভিজাত না সম্প্রদায়ের অধীনস্থ ব্যক্তিরা তার প্রভুর প্রতীক বা চিহ্ন অঙ্কিত কোনো ঊর্মি পরতে পারবে না।

দ্বিতীয়ত, সপ্তম হেনরি কোর্ট অব চেম্বার নামে একটি আদালত স্থাপন করে। এই কোর্টে রাজার

মনোনীত ব্যক্তিবর্গ জুরি হিসেবে ছিলেন। এই কোর্টের মোকদ্দমা পরিচালিত হতো গোপনে

এবং এর মাধ্যমে অবাধ্য একষয়ে অভিজাত শ্রেণীকে কঠোর শাস্তি দেয়া হতো।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি অনুদানের জন্য পার্লামেন্টের ওপর নির্ভর হতে

চাননি। তিনি বাধ্যতামূলক বিভিন্ন স্বপ্ন, সামন্ত রাজকীয় জমির উপর খাজনা

পণ্যের উপর খাজনা ধার্য করেন। ১৪৮৫ সালে তিনি নৌবাণিজ্য আইন পাশ করেন। এই

আইনের মাধ্যমে ইংরেজ বাণিজ্য জাহাজ শুধু ইংরেজদের মাধ্যমে চালিত হবে এবং ইংরেজ

জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আনা নেয়ার বিধান রাখা হয়।

ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও

সপ্তম হেনরির রাজত্বের প্রথম ১১ বছরে ৬ বার এবং রাজত্বের বাদবাকি সময়ে মাত্র একবার

পার্লান্টের অধিবেশন আহবান করা হয়।

সপ্তম হেনরি তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কাউন্টি বা জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্থানীয়

উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের ওপর নির্ভরশীর ছিলেন। চার্চের প্রতি তাঁর ক্ষোভ এবং কোনো কোনো

ব্যাপারে অপছন্দ থাকলেও তিনি চার্চের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েননি।

আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস

সপ্তম হেনরি ইংল্যান্ডে রেনেসাসের প্রসারে বিশেষভাবে সহায়তা করেন। অক্সফোর্ডকে তিনি

গ্রিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তোলেন। মূলত তিনি ইতালীয় শিল্প এবং স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

হেনরির বৈদেশিক নীতি যুদ্ধ নয় বরং ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের

ভিত্তিতে উঠলো। বৈবাহিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিনা

ক্ষেত্রেই তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন।

এ ছাড়াও বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে সপ্তম হেনরি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ

সম্পর্ক বজায় রাখেন। তিনি নিজে ইয়র্কশায়ার গোষ্ঠীভূক্ত রাজকন্যা এলিজাবেথকে নিয়ে

করেন। তিনি তাঁর পুত্র প্রার্থাকে বা ক্যাথরিনের সঙ্গে বিয়ে দেন। ক্যারি

ছিলেন স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ডের কন্যা। গ্রিপ আর্থার মারা গেলে হেনরি পোশের অনুমতি

নিয়ে ক্যাথরিনের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় পুরোর বিয়ে দেন। পরবর্তীকালে অষ্টম হেনরি নামে।

পরিচিত হয়ে তিনি সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।

ইংল্যান্ড সপ্তম হেনরির সময়ে ব্রিটেনি নামক অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে

জড়িয়ে পড়ে। তবে ১৪৯২ সালে ইটাপলিস এর চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

এভাবে সপ্তম হেনরি টিউডর বংশের উত্থানে এক গৌরবোজ্বল যুগের সূচনা করেন। তিনি ঘরে

এবং বাইরে ইংল্যান্ডের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি তাঁর পুত্রের জন্য

ইংল্যান্ডে একটি পরিপূর্ণ রাজকোষ, শান্তিও স্বচ্ছতা রেখে গিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়।

“সপ্তম হেনরির সময় ছিলো ইংল্যান্ডের সকল উন্নতি এবং সমৃদ্ধির বীজ বপনের সময় “

৩। অষ্টম হেনরি (১৫০৯ ১৫৪৯ )

টিউডর রাজবংশ তার শক্তিমত্তা ও সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করে অষ্টম হেনরির সময়ে। মাতা এলিজাবেথের কনিষ্ঠপুরা অস্টম হেনরি আঠারো বছর বয়সে একজন রেনেসাঁস যুবরাজ কোলেট, এ্যারাসমাস এবং সার সমান দুরের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি ল্যাটিন, ফরাসি, ইতালি ও রোমান ভাষা জানতেন। ভালোবাসতেন সঙ্গীত, নৃত্য ও ক্রীড়াশৈলী।

অষ্টম হেনরি ছিলেন শক্তিশালী রাজতন্ত্রের মূর্তপ্রতীক। তিনি কোনোরকম নিরোধিতা সহ্য

করতেন না। সেটি পোপ বা তাঁর নিষ্ঠ সহকর্মী যে কারো কাছ থেকেই নয়। তাঁর শাসনের

প্রথম দিকে তিনি তাঁর সহকর্মী এলসি সমাস ডেনমারের পরামর্শ ও বুদ্ধিমতে চালিত হলেও

পরবর্তীকালে তিনি সিদ্ধান্ত ও নীতির ব্যাপারে কারো ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তবে

রাজনৈতিক ক্ষমতার উচ্চশিখরে উঠার পর পোপের সঙ্গে তার সংঘাত ও অপ্রতিরোধ্য 

৪। অষ্টম হেনরি এবং ইংরেজ সংস্কার আন্দোলন

ইংল্যান্ডের সংস্কার আন্দোলন ছিলো রাজনৈতিক। ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সত্যিকার অর্থে

একজন গোঁড়া ক্যাথলিক ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রতি তাঁর ছিলো তাঁর ঘৃণা

ক্যাথলিকবাসের সপক্ষে The Defence of Sacrament নামে একটি ছোট্ট পুস্তিকা রচনা

করেন। পোপ এতে অত্যন্ত সম্রাট হন এবং তাঁকে বা (Defender of Faith) হিসেে

ঘোষণা দেন। কিন্তু এর কিছুকাল পরেই সবাইকে অবাক করে পোপ এবং রাজার মধ্যে

শুরু হয়। রাজা নিজেকে ইংরেজ চার্চের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক কারণে তিনি পোপকে তাঁর প্রথম স্ত্রী ক্যাথেরিন আরাগনের সঙ্গে নিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে নির্দেশ দেন। মূলত পুত্র সন্তান না হওয়ায় এ্যানি বোলেন নামক মহিলাকে ১৫৩০ সালে গোপনে নিয়ে করার তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। অপরদিকে ক্যাথরিন ছিলেন স্পেনের পঞ্চম চার্লসের ভগ্নী। পোপকে চাপ দিলেন যাতে তিনি হেনরির অনুরোধ মেনে না নেন। এর ফলে পোপ অষ্টম হেনরির নির্দেশের উত্তর না দিয়েই ব্যাপারটি বুলিয়ে রাখলেন। ইংরেজরা মনে করলো পোপ নয় বরং পঞ্চম চার্লস এই ইস্যুতে প্রধান বি করছে। হেনরি সমান ক্রেনমারকে ক্যান্টাবেরির প্রধান কে নিযুক্ত করেন যিনি বিবাহ, বিচেছদ মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। পার্লামেন্টের আইনের মাধ্যমে (পার্লামেন্ট, হেনরির অধীনে ছিলো) হেনরি পোপকে ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান এর পদ থেকে সরিয়ে দেন। ক্যাথরিন এই বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে গোপের কাছে অভিযোগ বা আবেদনপত্র পেশ করতে পারবে না বলে পার্লামেন্টে আইন পাশ করানো হয়। আর অফ সুপ্রিমেসি’ বা ‘আধিপত্যের আইনের মাধ্যমে রাজাকে ইংল্যান্ডের চার্চের সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।

এই আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড থেকে পোপকে কোনো প্রকার অর্থ পাঠানোর উপর নিে

আরোপ করা হয়। যদিও রাজা ইংল্যান্ডের চার্চেরা ক্ষমতাকে অনেকটা দুর্বল করে দিতে সক্ষ

হন, তবে তার অনুরোধে পার্লামেন্টো ছয় শর্তের আইন (Six Articles Act) নামে একটি

আইন প্রণীত হয় যা ক্যাথলিক ধর্মমতের মূল সুত্রগুলিকেই নিশ্চিত করেছিলো। এভাবে তিনি

বহু প্রোটেস্টান্টকে আশাহত করে ছিলেন যারা ইংল্যান্ডের চার্চকে সম্পূর্ণভাবে প্রোটেস্টানট

চার্চে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।

প্রোটেস্ট্যান্টবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাটিন ভাষায় রচিত বাইবেলের বদলে ইংরেজিতে

অনুবাদকৃত বাইবেল সকল চার্চে রাখার ঘোষণা দেন তিনি। ১৫৪১ সালে ডেনমারের অনুনাদ

চার্চে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং ধর্মীয় পুস্তকটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তিনি পানরি বা

যাজকদের জন্য দশম শ (Ten Articles) গ্রহণ করতে বাধ্য করেন। এই অনুচ্ছেদগুলি

চার্চের বা রোমের মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। ছয় শর্তের আইনে পানরি বা যাজকদের

প্রথাগত বিশ্বান বিহীত না করে আনুগত্য, ট্রানসারস্ট্যানশিয়েশন (মাংস ও রক্তের পরিবর্তে

রুটি ও মদের খানা ব্যবস্থা) ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মমতগুলিকেই মেনে নেয়া হয়।

তবে তার এই ধর্মীয় নীতিতে ক্যাথলিক বা প্রোটেস্টান্ট কেউ খুশি হ্যানি। ক্যাথলিকরা তাঁর

বিরুদ্ধে ছিলেন যেহেতু তিনি পোপের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করেন, আবার প্রোটেস্টান্টরা খুশি

ছিলেন না যেহেতু ক্যাথলিকদের পুরানো রীতি নীতি বাতিল করা হয় নি।

৬/৩৭

আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস

তাঁর শাসনের প্রথম পর্যায়ে হেনরি মন্ত্রীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তী কালে তাঁর

বিদেশ মন্ত্রী ওলসির বুদ্ধিমত্তায় মন্ত্রীদের বা রাজকীয় কর্তৃত্ববাদকে অপসারণ করে মধ্যবিত

শ্রেণীর সমর্থন নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তিনি সপ্তম হেনরি প্রবর্তিত কোর্ট অব স্টার চেম্বারের

মাধ্যমে অভিজাত শ্রেণীর মত করেন। পার্লামেন্টের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনার

জন্য তিনি (১৫১৫ থেকে ১৫২২) এই সাত বছর পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা থেকে বিরত

পরাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অষ্টম হেনরির রাজত্বকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সপ্তম হেনরির

রাজত্বকালে ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য ছিলো স্পেন, অস্ট্রিয়া, হ্যাপসবার্গ ও

ফ্রান্সের বুরনো পরিবারের পর নীতির মূল লক্ষ্য প্রথমত, ইউরোপের ব্যালেন্স

অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি টিকিয়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, ইউরোপের রাজনীতিতে

যে কোনো পক্ষে যোগ দানের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড তার নিজের স্বার্থের প্রতিই সর্ব প্রকার নার

দেখে।

অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছিলো। ধর্মক্ষেত্রে:

প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে সমঝোতার নীতি, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে দৃঢ়শাসন,

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ইউরোপীয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠভাবে অংশ নেওয়া এবং বহু এইটি

বিচ্যুতির পরও ইংল্যান্ড মহাদেশীয় শক্তির মর্যাদা লাভ করে।

৪। রাজা এডওয়ার্ড (১৫৪৭ ১৫৫৩ )

অষ্টম হেনরির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি নাবালক হওয়ায় তাঁর চাচা ডিউক অফ সামারসেটের নেতৃত্বে এবং পরবর্তীকালে ন রাজপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ হন। এই সময় ইংল্যান্ডের ধর্মনীতির ক্ষেত্রে সুম্পন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়। অষ্টম হেনরি তাঁর ধর্মনীতির ক্ষেত্রে ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট কাউকেই খুশি। করতে পারে নি। এডওয়ার্ড ইংল্যান্ডের চার্চকে সত্যিকার প্রোটেস্টান্ট করতে এগিয়ে আসেন। তিনি সুপার এবং ক্যালভিনের ধর্মমত সমগ্র ইংলান্ডে প্রচার এবং প্রসাবের ব্যবস্থা করেন। এ্যাংলিকান চার্চের মূল বা প্রোটেস্টান্ট এভাবে সহজবোধ্য সুস্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় করে তোলেন। আর্চবিশপ কেনমারের নির্দেশনায় ইংরেজিতে বাইবেলের অনুবাদের ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাধারণ প্রার্থনা (common prayer hook) নামক পুস্তকে উপাসনা পদ্ধতি লিপিবন্ধ করা হয়। এ ছাড়াও নর্ণায়ামারার সময় ৪২ দফা ধর্মনীতি সংকলিত একটি আইনে প্রোটেস্টান্ট ধর্ম নীতির সংকলিত একটি আইনে প্রোটেস্টান্ট ধর্মনীতিগুলি বিধিবদ্ধ করা হয়। এ্যাংলিকান চার্চকে প্রোটেস্টান্ট চার্চে পরিণত করা হয়। তাঁর সময়ে বিশপদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়, বিরুদ্ধে আইন শিথিল করা হয়।

৫। রানী ম্যারি টিউডর (১৫৫৩-১৫৫৮খ্রিঃ)

রানী ম্যারি ছিলেন অষ্টম হেনরি ও ক্যাথরিনের কন্যা। তার স্বামী স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ

ছিলেন ক্যাথলিক ধর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সিংহাসনে আরোহনের সময় তার বয়স ছিলো

সতের বছর। তাঁর মানের ট্রাজেডি তাকে সর্বদা ভারাক্রান্ত করে রাখতো। ছোটকাল থেকেই

তাঁকে একই শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যে, ইংল্যান্ডকে আবার রোমের কালি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল 

অর্থনৈতিক কারণও ছিলো। ম্যারি স্টুয়ার্টের মৃত্যুর পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ঐ

বছরই স্পেন কর্তৃক ইংল্যান্ডে আক্রমণের কথা ছিলো। তবে রবার্ট ড্রেক কার্ডিজে স্পেনীয়,

জাহাজ (প্রায় ত্রিশটি) অগ্নিবদ্ধ ও ধ্বংস করলে স্পেনের আক্রমণের সম্ভাবনা পিছিয়ে যায়।

এভাবে দুই পক্ষই সকল প্রস্তুতি সপ্তা করতে থাকে। জনকিন্স এর নেতৃত্বে ব্রিটিশরা।

নৌবাহিনী পুনর্গঠন করে। পুরানো বৃহত্তাকার জাহাজের বদলে দ্রুতগামী ছোট গ্যালন জাহাজ

প্রস্তুত করে। অপরদিকে দ্বিতীয় ফিলিপ তাঁর বিখ্যাত বিশাল মনে, ভের্দা কাপোত বছর বা

আর্মাডা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তাঁর বিশাল রনপোতের মধ্যে ছিলো ১৬০টি নৌকা (৪টি)

এক পাটাতন বিশিষ্ট পান নিয়ে চালানো জাহাজ न ) ২৫০০ বন্দুক, ৮০০০ নাবিক,

২,০০০ সৈন্য এবং ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এটি ডিউক অব মেডোনার নেতৃত্বে ইংরেজ

বাহিনীকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়।

১৫৮৮ সালের মে মাসে স্পেনিশ রয়পোত নছর লিসবন ত্যাগ করে এবং ফ্লেমিশ বন্দর (নেদারল্যান্ডের) সম্মুখে উপস্থিত হয়। সেখানে প্রায় ১৭,০০০ স্পেনীয় সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলো। অপরদিকে লর্ড হার্ডওয়ার্ডের নেতৃত্বে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড কাড়না কারণে জাহাজ তার গন্তবে পৌঁছায় বহু দেরিতে (জুলাই)। ইংরেজদের জাহাজগুলি বৃহৎ স্পেনিশ জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ব্রিটিশদের জাহাজ আকারে ছোট হওয়ায় আক্রমণে তাদের সুবিধা হয়। আভিলাইনসের যুদ্ধে স্পেনিশরা পরাজিত হয় এবং প্রচন্ড বড় জাহাজ গুলিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দ্বিতীয় ফিলিপ আশা করেছিলেন যে ইংরেজ জাতি যেহেতু বিভক্ত তাই এলিজেবেখের বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে সাহায্য করবে। তবে তেমন কিছু হয় নি। বরং এই যুদ্ধে ইংল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগত হয়ে উঠে। প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক দুই পক্ষই রানীর পাশে দাড়ায়। অ্যাংলো-স্পেন যুদ্ধ ১৬০৪ সাল পর্যন্ত চলে, তবে কোনো পক্ষই চান্ত জয় লাভ করতে পারে নি। তবে স্পেনের জন্য এই যুদ্ধে তার সম্পদ এবং অর্থ নিঃশ্বেষ করে দেয়। পরবর্তী রাজা প্রথম জেমস স্পেনের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে ইংরেজ সিংহাসনে বসার জন্য। আমার্ডার পতন একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী ঘটনা। এটি ইংল্যান্ডকে ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি এবং ইংল্যান্ডকে সমুদ্রের একছত্র রাণী হিসেবে ঘোষণা করে। এলিজাবেথের ধর্মীয় সংস্কার এতে পূর্ণতা পায় এবং এই যুদ্ধের পর ক্যাথলিক আক্রমণের ভীতি দূর হয়। অপরদিকে স্পেনের জন্য এটি ছিলো চূড়ান্ত পতন। এরপর তার মহাদেশে দীর্ঘকালীন শ্রেষ্ঠত্ব এবং একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নষ্ট হয়।

রাণী এলিজাবেথের যুগ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ। এই সময় ইংল্যান্ড জান, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হয়। সারা বিশ্বে ইউনিয়ন ব্ল্যাক এর পতাকা উড়তে থাকে। তাঁর প্রতিভাবান উপদেষ্টা ছিলেন স্যার উইলিয়াম গিলি, রবার্ট ভাষালি, স্যার নিকোলাস ও স্যার ফ্রান্সিস ওয়াশিংটন। এলিজাবেদের সময় ইংরেজি সাহিত্য, শিল্প, স্থাপতা, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা সর্বক্ষেত্রেই সাফনের সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হয়। এডমন্ড স্পেনসার, শেক্সপিয়ার, বেন জনসন খ্রিস্টোফার মারলো, স্যার ফ্রান্সিস বেকন সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। সঙ্গীতে জনসন ও হেরিক জনপ্রিয় ছিলেন। স্থাপত্য শিল্পে গণিক রীতির পরিবর্তে ইতালির ক্লাসিক প্রবর্তিত হয়। 

এছাড়াও এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডের নৌবাণিজ্যের জয়যাত্রা সূচিত হয়। এর ফলে দ্রুত ইংল্যান্ডের উপনিবেশ গড়ে উঠে।

রানী এলিজাবেথ ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। কোনো শাসক তাঁর মতো এতো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হননি এতো যোগ্যতা এবং সাফল্যের সঙ্গে দমন করার ক্ষমতাও রাখেন নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দনীয় এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তাঁর জীবন যাপন পবিত্রম দেশের প্রতি ভালবাসা তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো। এলিজাবেথ নিজেই নিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রায় ৪৫ বছর যুদ্ধ এবং শান্তির মধ্যে তিনি যোগাতার সঙ্গে দেশ শাসন করেন। তিনি ছিলেন রেনেসাঁসের সন্তান। তিনি ধর্মকে কোলেট, এ্যারাসমাস এর চেতনা দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। ধর্মবিষয়ের স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং ইংল্যান্ডকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম ছিলেন রানী এলিজাবেথ।

Updated: July 29, 2022 — 5:24 am

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Help Bangla © 2023 Frontier Theme