ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় রচনাধর্মীপ্রশ্নপত্র 2023 ।।বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’-এর কীরূপ ভূমিকা ছিল

ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় রচনাধর্মীপ্রশ্নপত্র 2023 ।।বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’-এর কীরূপ ভূমিকা ছিল 

প্রশ্ন : বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভূমিকা ছিল ?

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অঙ্গরূপে গড়ে ওঠে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।

প্রতিষ্ঠা : বিশিষ্ট আইনজীবি ও শিক্ষাদরদি তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। উদ্দেশ্য : এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

পৃষ্ঠপোষকগণ : এই শিক্ষায়তনের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু এবং প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন রাসবিহারী ঘোষ। এ ছাড়াও মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, ভূপেন্দ্রনাথ বোস, নীলরতন সরকার প্রমুখ শিক্ষাব্রতী প্রথম থেকেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন

পাঠ্যক্রম : প্রথমদিকে এখানে দুই রকমের পাঠ্যক্রম চালু হয়। একটি ছিল তিন বছরের অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম। অপরটি ছিল চার বছরের মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম। প্রবেশিকা পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্ররাও এখানে অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রমে ভরতি হওয়ার সুযোগ পেত। এখানে গ্রন্থ প্রকাশনা, রং মাখানো, ছুতোরের কাজ, বিভিন্ন ধরনের খোদাই করা, সাবান তৈরি, চামড়া ট্যান করা প্রভৃতি শেখানো হত। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ভরতির সুযোগ পেত। এদের পাঠ্যক্রমের তিনটি প্রধান বিষয় ছিল যন্ত্র বিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন এবং ভূবিদ্যা। প্রমথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সমন্বয় : ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মিশে যায়। আর স্বাধীনতার পর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। মন্তব্য: স্বদেশি যুগের এই বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে অঙ্কুরিত হয়েছে স্বদেশবোধ ও জাতীয়তাবোধ। ঔপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙে প্রকৃত মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা।   

প্রশ্ন :  বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে বসু বিজ্ঞান মন্দির এর কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

উত্তর-আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, তার মধ্যে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ ছিল অগ্রগণ্য। 

প্রতিষ্ঠা : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান সাধক জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনের আদলে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। উদ্দেশ্য : এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং জগদীশচন্দ্র লিখেছেন—‘এর মুখ্য উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো।’ তরুণতর বিজ্ঞানীদের সামনে বিশ্বমানের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করে দিতে তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্রতী হন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত আবিষ্কার হবে, তার সুফলে প্রত্যেকের অধিকার থাকবে। 

বহুমুখী বিজ্ঞানচর্চা : বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিস্ক প্রভৃতি বিভাগ খোলা হয়।

পরিচালক সমিতি : বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার পর তার পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সমিতি গঠিত হবে। এই সমিতির সদস্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নীলরতন সরকার, ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং স্বয়ং জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার : বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।

মন্তব্য: ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা তথা নিত্য-নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দির নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আজও এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্ররূপে সগৌরবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।

প্রশ্ন :  জাতীয় শিক্ষা পরিষদ সম্পর্কে টীকা

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরুর থেকেই একদিকে যেমন ছিল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার প্রবণতা, অন্যদিকে ছিল জাতীয় উদ্যোগে স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়াস। এরই সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।

প্রতিষ্ঠা : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে রাসবিহারী ঘোষের সভাপতিত্বে এবং ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীর অর্থানুকূল্যে ও সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

উদ্দেশ্য : জাতীয় শিক্ষা পরিষদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

কর্মকাণ্ড : কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ (ঋষি অরবিন্দ) এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এ ছাড়াও বাংলার নানা স্থানে গড়ে ওঠে আরও অসংখ্য জাতীয় বিদ্যালয়। সাধারণ বিজ্ঞান ও কলা বিদ্যার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে স্থাপিত হয় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’ নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান। বিশিষ্ট আইনজীবি তারকনাথ পালিত এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য, আর এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন প্রমথনাথ বসু। মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রসার এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকে স্বদেশি আন্দোলনের ‘প্রথম বৃহৎ গঠনমূলক প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্যর্থতা:  বিপুল উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত চরম অর্থাভাব এবং সরকারি চাকুরিতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির মূল্যহীনতা একে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে।

মন্তব্য : ব্যর্থতা সত্ত্বেও পরিশেষে বলা যায়, স্বদেশি যুগের এই বিজ্ঞান চর্চার প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে জাগরিত হয়েছে স্বদেশবোধ ও জাতীয়তা। ঔপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা।

প্রশ্ন : ছাপাবইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : চলমান হরফের প্রচলন ও মুদ্রণ বিপ্লব সারাবিশ্বের জ্ঞানচর্চাকে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীর হাত থেকে মুক্ত করে পৌঁছে দিয়েছিল সাধারণের দোরগোড়ায়। ভারত তথা বাংলায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ, সর্বোপরি গণশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানা ও ছাপাবইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুতপক্ষে, ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষার প্রসার বিষয় দুটি বিশ্বের সব দেশেই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে চিহ্নিত। বইয়ের বিশাল চাহিদার জোগান দেওয়া তখনই সম্ভব হয়, যখন তা ছাপানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ছাপাখানা প্রস্তুত থাকে, আবার গণশিক্ষার প্রসার না ঘটলে ছাপাখানা তথা ছাপাবইয়ের কোনো কদরই থাকে না। পূর্বেকার হাতে লেখা পুঁথি ছিল অনেকক্ষেত্রেই দুর্বোধ্য এবং স্বাভাবিক ভাবেই পঠন-পাঠনের প্রতিকূল। কিন্তু ছাপাবই এই অসুবিধা দূর করে। একই ধরনের বই বহু সংখ্যায় ছাপার সুবিধার জন্য সার্বিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সুবিধা হয়। ছাপাবই দামে সস্তা হওয়ায় সেগুলি সাধারণ মানুষের হাতে সহজে পৌঁছে যায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে গণশিক্ষার বিপুল প্রসার ঘটে। উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করলে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। মিশন প্রেস থেকে সুলভে ছেপে বেরোয় অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক। সুলভে বা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে ‘স্কুল বুক সোসাইটি’। ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সংবাদ প্রভাকর’ প্রভৃতি অসংখ্য পত্রপত্রিকা এখান থেকে প্রকাশিত হয়ে গণশিক্ষার ধারাকে বেগবর্তী করেছিল। ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে আরও অসংখ্য ছাপাখানা, আর পাল্লা দিয়ে প্রকাশিত হতে থাকে ছাপাবই।

‘শিশুশিক্ষা’, বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’ প্রভৃতি। ছাপাখানায় মাতৃভাষায় প্রকাশিত হতে থাকে পত্রিকা, আইন, ধর্ম, নীতিকথা, ইতিহাস, কৃষিকাজ, সংগীত, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ের বই—যার ফলে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে যেতে থাকে শিক্ষার্থীদের সামনে। ছাপা হয় আঞ্চলিক ও অনুবাদ সাহিত্য। ছাপাখানা শিশুশিক্ষার অগ্রগতি ও প্রসার ঘটায়, প্রকাশিত হয় মদনমোহন তর্কালংকারের এইভাবে মধ্য-অষ্টাদশ, ঊনবিংশ শতকে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার বহুমাত্রিক অভিধায় বাংলাকে প্রাণ-চঞ্চল করে তুলেছিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাঙালি তথা ভারতবাসী পৌঁছে গিয়েছিল নবজাগরণের দোরগোড়ায়।

আরোও পড়ুন ” –একাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞান অধ্যায় ভিত্তিক সাজেশন 2022 । Class 11th suggestion 

আরোও পড়ুন ” – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা পঞ্চম অধ্যায় দশম শ্রেণী 2023

আরোও পড়ুন ” – দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল বিষয়ের প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্নপত্র। শিক্ষার একটা শাখা হিসেবে ভূগোল অধ্যায়ের প্রশ্নপত্র

Leave a Comment