একজন আদর্শ শারীরশিক্ষা নেতার গুনাবলি আলোচনা করো।
ভূমিকা
য িনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। নেতার কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করা। নেতৃত্বদানের কঠিন দায়িত্বশীল কাজটি সম্পাদনের জন্য একজন নেতার অনেকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। কেননা উপযুক্ত নেতৃত্ব যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ অর্জনকে সহজতর করে, তেমনি নেতার অযোগ্যতা প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত ও গৃহীত নীতিসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা ও তদারকি করার দায়িত্ব নেতার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শিক্ষায় নেতৃত্বের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা। শিক্ষায় নেতৃত্ব সুচিন্তিত উপায়ে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মী নিয়োগ ও নির্দেশনা, প্রতিষ্ঠানের মানবিক ও বস্তুগত সম্পদ ও উপাদানের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও পরিকল্পনা মোতাবেক সকল কাজের সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করে। যোগ্য নেতৃত্বের অন্যতম দায়িত্ব হলো কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবসম্পদ সম্মিলিতভাবে পরিচালিত করা, কেননা সংঘবন্ধ ও সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা ছাড়া কখনো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তাই নেতৃত্ব যত শক্তিশালী হবে প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায় সংগঠনের স্থিতিশীলতা, সাফা ও অর্জনও তত মজবুত হয়।
বর্তমান ইউনিটে নেতৃত্বের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, আদর্শ ও কার্যকর নেতার গুণাবলি, কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
নেতৃত্বের ধারণা (Concept of Leadership)
নেতৃত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ Leadership এবং নেতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Leader। Leadership শব্দটি এসেছে ইংরেজী Lead থেকে Lead শব্দের অর্থ হলো চালনা করা, পথ দেখানো এবং নির্দেশ সুতরাং যিনি নির্দেশ প্রদান করেন, সামনে থেকে সব কিছু পরিচালনা করেন তাকে নেতা Leader গুণাবলি বা যোগ্যতাকে বলে নেতৃত্ব। এইচ ও ডানেল এর মতে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য জ হতে প্ররোচিত ও উদ্যোগী করার কাজকেই নেতৃত্ব বলে। এলভিন ডব্লিউ গুন্ডনার এর মতে নেতৃত্ব ব্যভি সেই নৈতিক গুণাবলি যা অন্যদের অনুপ্রেরণা দিয়ে বিশেষ দিকে ধাবিত করে। কিম্বল ইয়ং এর মতে নেতৃত্ব হলো ব্যক্তির সেই গুণাবলি যার মাধ্যমে সে অন্যের কর্মধারা প্রভাবিত করে এবং অন্য সবার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে।
সাধারণত নেতৃত্ব বলতে একদল লোককে কোন একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠিত করাকে বুঝায়। যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে বলা হয় নেতা। শিক্ষাক্ষেত্রেও নেতৃত্ব একটি অপরিহার্য বিষয়। শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব বলতে উদ্দেশ্য অর্জনকে সামনে রেখে কাজ সম্পাদনে কর্মীদের উৎসাহিত করার জণ ও কৌশলকে বোঝায়। বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্নভাবে নেতৃত্বের ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন। স্টকডিল (Stogdill)-এর মতে, ‘Leadership may be considered as the process (act) of influencing the activities of an organized group in its efforts toward goal setting and goal achievement’ অর্থাৎ নেতৃত্ব হচ্ছে এমন কার্য বা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন একটি সংগঠিত দল তাদের লক্ষ্যাদি নির্ধারণ এবং সেগুলো অর্জনের উদ্দেশ্যামুখী কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে। অন্যদিকে কোহেন (Cohen) মনে করেন নেতৃত্ব হলো কোন কাজ বা প্রকল্প সম্পাদন এবং উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অপরের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে ব্যবহার করার কৌশল বা দক্ষতা। (Leadership is the art of influencing others to their maximum performance to accomplish any task, objective
শিক্ষায় নেতৃত্ব (Leadership in Education)
নেতৃত্ব হল এমন একটি শক্তিশালী উপাদান বা কৌশল যা অধস্তন বা দলের বিভিন্ন লোকের প্রকৃতি ও স্বরূপকে সামনে রেখে তাদেরকে এমনভাবে পরিচালিত করা যাতে সবাই আস্থার সাথে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় বা সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর হয়। বস্তুত কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে কোন ব্যক্তি বা দলের আচরণ, মনোভাব, প্রচেষ্টা ও সামগ্রিক কর্মকান্ডের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়াকেই নেতৃত্ব বলে। নেতৃত্ব যাচ্ছে একটি প্রভাবিতকরণ কার্যক্রম। নেতার কাজই হলো নেতৃত্ব দান। নেতা হলো যিনি একদল মানুষকে কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিচালনা করেন। তাই Leadership বা নেতৃত্ব বলতে পথপ্রদর্শন বা পরিচালনার কলাকৌশলকে বুঝায়। Leadership is the ability of an individual or a group of individuals to influence and guide followers or other members of an organization. শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্বের ধারণা, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ক্ষেত্রের নেতৃত্বের মতই। বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রাথমিক ও মৌলিক সংগঠন। সকল সংগঠন অপেক্ষা এ সংগঠনের তাৎপর্য অধিক। কেননা বর্তমান ও ভবিষ্যত মানব সম্পদকে বিদ্যালয়েই কাংক্ষিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে হয়েছে এবং হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান বিদ্যালয় নামক একটি শক্তিশালী সংগঠনের পদাধিকার বলে নেতা। তাঁর মধ্যে কার্যকর নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতাগুলোও থাকা অত্যাবশ্যক। কেননা তার নেতৃত্বেই আগামী দিনের নেতা ও মানবসম্পদ হিসেবে শিক্ষার্থীগণকে গড়ে উঠবে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। Educational leadership is usually the responsibility of school administrators and principals, who strive to create positive change in educational policy and processes. Educational leader is an individual or group of people who are in charge and lead schools and students to the best education প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষা নেতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নেতৃত্ব কৌশল দক্ষতায় নেতা দলের অন্তর্গত ব্যক্তিবর্গকে একটি টীম-এ পরিণত করেন ফলে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দৃঢ়তা পায় এবং সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের প্রতাষ সৃষ্টি হয়।
নেতৃত্বের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য (Nature and Characteristics of Leadership)
নেতৃত্ব হল এমন একটি শক্তিশালী উপাদান বা কৌশল বা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের
ন িমিত্তে কোন ব্যক্তি বা দলের আচরণ, মনোভাব, প্রচেষ্টা ও সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। বস্তুত: নেতৃত্ব একটি প্রভাবিতকরণ কার্যক্রম। Jame J. Cribbin এর মতে Leadership is a process of influence on a group in a particular situation at a given point of time, and in a specific set of circumstances that stimulates people to strive willingly to attain organisational objectives and satisfaction with the type of leadership provided. নেতৃত্বের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা লক্ষ্য করা যায়। যোগ্য নেতৃত্ব তার অধীনস্থদের সম্পর্কে যেমন স্বচ্ছ ধারণা রাখেন তেমনি তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রেষণাদানের মাধ্যমে কাজটি করিয়ে নিতে পারেন।
• নেতা হলেন কাজ ও সম্মান ও আদর্শের পথ প্রদর্শক, নেতা বিলাসপ্রিয় হবে না।
নেতা রাগী বা বিদ্বেষভাবাপন্ন হবেন না
• নেতা নীতি বা স্বেচ্ছাচারিতা করবেন না। নেতা অবশ্যই হবেন মিতব্যয়ী, দুর্নীতিমুক্ত।
তার নিজস্ব পেশার ও কাজের প্রতি আস্থাশীল থাকবেন,
• নেতা হবেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
• সত্যিকার নেতা তার কৃতকর্মের দায়কে সর্বদাই কাঁধে নিতে প্রস্তুত থাকবেন।
নেতা অবশ্যই জানবেন কখন, কিভাবে, কী করতে হবে।