একটি ফুটবল খেলার যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
ফুটবল
ফুটবল খেলা পৃথিবীর জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আধুনিক ফুটবল খেলার উৎপত্তি হচ্ছে ইংল্যান্ডে। সব দেশে একই নিয়মে খেলার জন্য ১৯০৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল এসোসিয়েশন বা ফি (FIFA) গঠিত হয়। এই সংগঠনের মাধ্যমে ফুটবল খেলা বিশ্বের প্রায় সব দেশে প্রসার লাভ করেছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের ফুটবল খেলার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফিফার সদস্যভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক ফুটব সংস্থা ফুটবল খেলার আইন প্রণয়ন ও
প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। এই খেলা
পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৭টি আইন
রয়েছে। নিচে আইনগুলো ধারাবাহিকভাবে
সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো
১। খেলার মাঠ। মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ বা ১২০ মিটার এবং সর্বনিম্ন ১০০ গজ বা ৯০ মিটার। প্রস্থ সে মিটার, সর্বনিম্ন ৫০ গজ বা ৪৫ মিটার।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মাঠের মাপ হবে ক) দৈর্ঘ্য- ১২০ গজ, গ্রহ- ৮০ গজ বা গ) দৈর্ঘ্য ১১৫ গজ, প্রস্থ ৫ (গ) দৈর্ঘ্য ১১০ – ০
মাঠের এই তিনটি মাপের যে কোনো একটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জ ছোট আকারের মাঠ হয়। এ ১০০ গজ ও গ্রন্থ ৫০ গজ
১.১ নাগ- মাঠের প্রত্যেকটি দাগের চওড়া ৫ ইঞ্চির বেশি হবে না। দৈর্ঘ্যের দাগকে টাচ লাইন ও প্রস্থের দাগকে
গোল লাইন বলে।
১.২ গোল এরিয়া- দুই গোল পোস্টের উত্তর দিকে ৬ গড়া এবং সামনের দিকে ৬ গরু নিয়ে উভয় নাগকে একটি
সরলরেখা দ্বারা যোগ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২০ গজ। এই দাগের ভিতরের জায়গা এরিয়া
১.৩ পেনাল্টি এরিয়া- গোল পোস্টের উভয় দিকে ১৮ গজল এবং সামনের দিকেও ১৮ গজ নিয়ে উভয় দাগকে একটি সরলরেখা দ্বারা যোগ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪ গল্প। এই দাগের ভিতরের জায়গাকে পেনাল্টি এরিয়া
১.৪ পেনাল্টি মার্ক- যে চিহ্নতে বল বসিয়ে পেনাল্টি কিক নেয়া হয় তাকে পেনাল্টি মার্ক বলে। দুই গোল পোস্টের
মাঝখান থেকে সামনের দিকে ১২ গজ দূরে চিহ্ন দিতে হবে যার ব্যাগ হতে ৯ ইঞ্চি।
১.৫ পেনাল্টি আর্ক- পেনাল্টি মার্ককে কেন্দ্র করে ১০ গরু ব্যাসার্ধ নিয়ে পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। একে পেনাল্টি আর্ক বলে।
১.৬ কর্নার পতাকা মাঠের চার কোথায় ৪টি পতাকা থাকবে। পতাকা দণ্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট। পোস্টের
মাথা চোখা হবে না এবং মাথায় পতাকা লাগানো থাকবে। মাঠের মাঝখানের দুই দিকের টাচ লাইন থেকে ১ গজ দূরে দুটি পতাকা থাকবে। একে ঐচ্ছিক পতাকা বলে। ১.৭ কর্নার এরিয়া- কর্নার পতাকাদন্ড থেকে ১ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। যার মধে
বসিয়ে বর্নার কিক মারতে হবে। ১.৮ গোল পোস্ট- মাটি থেকে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত উচ্চতা ৮ ফুট ও দুই গোল পোস্টের মাঝের দূরত্ব গোল পোস্টের পিছনে জাল টাঙ্গাতে হবে। জাল এমনভাবে টাঙ্গাতে হবে যেন গোল কিপারের চলাফেরায় কোন অসুবিধে না হয়।
১.৯ সেন্টার সার্কেল- মধ্য রেখার মাঝখান থেকে ১০ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকতে হবে যাকে সেন্টার
সার্কেল বলে।
২। বা চামড়া বা অন্য কোন অনুমোদিত বস্তু দ্বারা তৈরি এবং গোলাকার হবে। বলের পরিধি ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার। খেলা আরম্ভের সময় বলের ওজন হবে ৪১০-৪৫০ গ্রাম। ৩। খেলোয়াড়ের সংখ্যাঃ একটি দলে ১৮ জন খেলোয়াড় থাকবে। এর মধ্যে ১১ জন মাঠে খেলবে বাকি ৭ জন অতিরিক্ত
খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে থাকবে। যদি কোন দলে ৭ জনের কম খেলোয়াড় থাকে তবে দেলা করা যাবে না। ৪। খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম। একজন খেলোয়াড়ের বাধ্যতামূলক সাজপোশাক হচ্ছে শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিগার্ড ও বুটস। অন্য খেলোয়াড়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এমন কোন বন্ধ বা পোশাক পরা যাবে না।
৫। রেফারি খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি থাকেন।
৬। সহকারি রেফারি। রেফারিকে সাহায্য করার জন্য ২ জন সহকারি রেফারি থাকেন। এছাড়া মাঠের বাইরে একজন চতুর্থ রেফারি থাবেনা। তিনিও খেলা পরিচালনার ব্যাপারে রেফারিকে সাহায্য
৭। খেলার সময়: আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে খেলার সময় প্রতি অর্থে ৪৫ মিনিট মাঝে বিরতি ১৫ মিনিটের বেশি হবে না। ৮। খেলা আর খেলার শুরুতে টস বিজয়ী দলকে অবশ্যই মাঠের যে কোনো সাইড বেছে নিতে হবে। টসে পরাজিত
দল রেফারির সংকেতের সাথে সাথে কিক অফ এর মাধ্যমে খেলা শুরু করবে। খেলা আরম্ভের সময় উভয় দলের খেলোয়াড়গণ নিজ নিজ অর্থে অবস্থান করবে। কিক অফ থেকে সরাসরি গোল হতে পারে।
৯। বল খেলার মধ্যে ও বাইরে বল গড়িয়ে বা শূন্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে গোল লাইন বা লাইন যখন অতিক্রম করে
তখন সে বলকে বাইরে ধরা হয়। বা দাগের উপরে থাকলে খেলার মধ্যে গণ্য হবে।
১০। গোল হওয়া: বল শূন্যে বা মাটি দিয়ে গড়িয়ে দুই পোস্টেনা ও ক্রসবারের নিচ দিয়ে গোল লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে গোল হয়েছে বলে ধরা হবে।
১১। অফ সাইড বল ছাড়া কোন খেলোয়াড় বিপক্ষের অর্থে অবস্থান করে এবং তার সামনে বিপক্ষের ২ জন খেলোয়াড়
না থাকে ঐ অবস্থায় যদি সে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল পায় তাহলে অফসাইড হবে।
১২। ফাউল ও অসদাচরণ: ফাউল বা অসদাচরণ হলে দুই ধরনের কিক দেয়া হয়।
4/33
ক) ডাইরেক্ট ফ্রি কিক, খ) ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক। নিচের ১০টি অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ বা ডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেয়া হয় i. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে লাথি মারা বা লাথি মারার চেষ্টা করা।
ii. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ল্যাং মারা বা ল্যাং মারার চেষ্টা করা। iii. বিপক্ষ খেলোয়াড়ের উপর লাফিয়ে পড়া।
iv. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আক্রমণ করা।
v. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করা বা আঘাত করার চেষ্টা করা।
vi. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে থাকা মারা।
vii. বল খেলার পূর্বে বিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ হওয়া viii. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরে রাখা।
ix. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে মু মারা।
* ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরা (নিজ পেনাল্টি এরিয়ায় গোলরক্ষকের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।)
নিচের অপরাধগুলোর কারণে পরোক্ষ বা ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেয়া হয় i. গোলরক্ষক তাঁর হাতে বল নিয়ন্ত্রণের পর খেলায় পাঠানোর পূর্বে যদি ৬ সেকেন্ডের বেশি সময় বল ধরে রাখে।
ii. গোলরক্ষক একবার বল ছেড়ে দেয়ার পর অন্য খেলোয়াড় টাচ করার পূর্বেই যদি পুনরায় বল টাচ করে ।
iii. স্বীয় দলের কোন খেলোয়াড়ের ইচ্ছাকৃত কিক করা বল যদি গোলরক্ষক হাত দিয়ে টাচ করে বা ধরে। iv. নিজ দলের কোন খেলোয়াড় কর্তৃক প্রো-ইন করা নল যদি গোলরক্ষক হাত দিয়ে টাচ করে না ধরে।
v. বিপজ্জনকভাবে খেলা।
vi. বল না খেলে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের সম্মুখগতিতে বাধা দেয়া। VII. গোলরক্ষক বল ছুঁড়ে দেয়ার সময় তাঁকে বাধা দেয়া।
১৩। ফ্রি কিক যে কিকে সরাসরি গোল হয় তাকে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক বলে। যে কিকে সরাসরি গোল হয় না তাকে পরোক্ষ
ফ্রি কিক বলে অর্থাৎ কিকার ছাড়া অন্য কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শ ব্যতীত গোলে বল ঢুকলে গোল হবে না।
১৪। পেনাল্টি কিক, রক্ষণদলের কোনো খেলোয়াড় পেনাল্টি এরিয়ার ভিতরে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিকের ১০টি অপরাধের যে কোনো একটি করে তাহলে আক্রমণকারী দল পেনাল্টি স্পট থেকে যে কিকের মাধ্যমে খেলা পুনরায় শুরু করে তাকে পেনাল্টি কিক বলে।
১৫। গ্রো-ইন। কোনো খেলোয়াড়ের শেষ স্পর্শে বলের সম্পূর্ণ অংশ মাটি গড়িয়ে বা শূন্যে দিয়ে টাচ লাইন অতিক্রম করলে বিপক্ষলন ঐ স্থান থেকে যে নিক্ষেপের মাধ্যমে খেলা শুরু করে একে প্রো-ইন বলে। প্রো-ইন থেকে সরাসরি গোল ১৬। গোল কিক। আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড়ের শেষ স্পর্শে বল দুই গোল পোস্ট ও ক্রসবারের বাইরে দিয়ে যখন
গোল লাইন অতিক্রম করে তখন গোল এরিয়ার যে কোনো জায়গা থেকে রক্ষণকারী দল যে কিকের মাধ্যমে খেলা পুনরায় শুরু করে তাকে গোল কিক বলে।
১৭। কর্নার কিক। রাক্ষণকারী দলের কোনো খেলোয়াড়ের শেষ স্পর্শে বল দুই গোল পোস্ট ও ক্রলবারের বাইরে দিয়ে
যখন গান গাই অতিক্রম করে তখন যে কিকের মাধ্যমে খেলা পুনরায় শুরু করে তাকে কর্ণার কিক বলে।