ক্রীড়ার সংজ্ঞা দাও। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
ক্রীড়ার সংজ্ঞা দাও।
কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পদ্ধতিকে Management বলে। সুষ্ঠুভাবে ফ্রীড়া পরিচালন পদ্ধতিকে বলা হয় Sport Management of ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা হল, এমন এক বিশেষ পদ্ধতি, যা প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সহজে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। (Management is a process to achieve the goal of the organisation, utililizing the total system on wings of the organisation in a proper manner). কিন্তু ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনার সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। যথা
জর্জ টেরি: জর্জ টেরি পরিচালন ব্যবস্থার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “মানুষ ও সম্পদের ব্যবহারগত উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও সুসম্পন্ন করার জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, বাস্তবায়ণ এবং নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিচালন ব্যবস্থা (Management is process of planning organizing. actualizing and controlling to determine and accomplish the objectives of the of people and resources.)
ম্যাক ফারল্যাণ্ড: ম্যাক ফারল্যান্ডের মতে, “পরিচালন ব্যবস্থা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা পরিচালকবৃন্দ প্রণালী বন্ধ, সমন্বয়মূলক ও সংযোগী মানবিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদ্দেশ্যময় সংগঠন তৈরি, নির্দেশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন করে।” Mary Parker Follelt: Filelelt এর মতে, “পরিচালনা হলো ব্যবহারিক প্রয়োগ পদ্ধতি যা
কোনো কিছু পাওয়ার জন্য মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।” Chelladurai: Chellaciurai ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,
একটি অভিন্ন শেষের দিকে ইচ্ছুক মানুষের প্রচেষ্টার সমন্বয়।’ অন্য একটি সাধারণ লক্ষ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির প্রচেষ্টার সমন্বয়কেই বলে নির্বাহ বা ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা।
ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
Grorge R. Terry George অন্যভাবে পরিচালনাকে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর মতে, পরিচালনা একটি প্রক্রিয়া যা পরিকল্পনা, সংগঠন, সম্পাদনা, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্ট এবং এর মাধ্যমে মানবশ্রম ও উপাদানের ব্যবহারের দ্বারা কোনো সংগঠনের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে, তা সম্পূর্ণভাবে
অর্জনের পথ প্রশস্থ করা হয়। Larry: Larry-র মতে, “পরিচালনার প্রায়োগিক কর্মসূচীর সঙ্গে ব্যবস্থাপনার সম্বন্ধ একটু বেশিই। প্রত্যেক পরিচালককেই ব্যবস্থাপকের কাজ করতে হয়, কিন্তু খুব কম ব্যবস্থাপকই পরিচালক হিসাবে কাজ করেন।”
পরিশেষে বলা যায়, শারীরশিক্ষা বা ক্রীড়ার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত কোনো সংগঠন বা বিভাগের ক্রীড়াকেন্দ্রিক পরিকল্পনা, সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, আয়-ব্যায়ের হিসাব, নেতৃত্ব প্রদান, মূল্যায়ণ ইত্যাদির সমন্বয়কে ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা বলে।
ফেডরিখ উইনসলো টেলরকে বিজ্ঞানসম্মত পরিচালনার জনক বলে অভিহিত করা হয়। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সততই তিনি পরিচালনা সংক্রান্ত চিন্তাভাবনাকে নতুন আরে সাজিয়েছেন। হেনরী ফেডল প্রথম আধুনিক প্রশাসনিক পরিচালনার ধারণা দেন। ফেডল পরিচালনার প্রক্রিয়াকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা— পরিকল্পনা, সংগঠনা, আদেশদান, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।
ফেওল সর্বপ্রথম 14টি পরিচালনা সংক্রান্ত নীতির উল্লেখ করেন। যেগুলিকে পরিচালনা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ও কার্যকলাপের সাধারণ ভিত্তি বলে ধরা হয়। নিম্নে এই নীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
(D) কর্মবণ্টন: বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন যোগ্য ব্যক্তির উপর অর্পিত হলে একই শ্রমের বিনিময়ে অনেক বেশি কাজ পাওয়া যায়। পরিচালনার বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব সেই সম্পর্কিত প্রশিক্ষিত ব্যক্তির উপর অর্পিত হলে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়। © অধিকার এবং দায়িত্ব: একজন পরিচালক তাঁর অধিকার এবং নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে
পারে। কার্যালয়ে নিজস্ব পদমর্যাদা তাঁকে অধিকার দেয় এবং তাঁর অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বুদ্ধি, নৈতিকবোধ তাঁকে নিজস্ব ক্ষমতা দেয়। যখনই তাঁকে তাঁর অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয় হয় তার মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ববোধ জাগরিত হয় এবং তিনি নির্দিষ্ট লক্ষ্য প্র করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। 3) শৃঙ্খলা শৃঙ্খলা বলতে বোঝায় আধিকারিকদের মান্য করা। চাকরীর শর্তের প্রতি সামাতা,
চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন, নিজের কাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করা প্রভৃতি। শৃঙ্খলা রক্ষা করার উপায়গুলি হলো পরিচালনার সর্বস্তরে তত্ত্বাবধান, কর্মী এবং আধিকারিকদের মধ্যে চুক্তির স্বচ্ছতা, অপরাধের শাস্তি, ভালো কাজের পুরস্কার প্রভৃতি।
@ আদেশের একত্ব এই নীতি অনুযায়ী একজন কর্মচারী একটি কাজের দায়িত্ব একমাত্র
উর্ধ্বতন আধিকারিকের কাজ থেকেই পান। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে একই দায়িত্ব সম্পর্কে আদেশ, আসলে স্বাবাভিকভাবেই একজন কর্মচারী দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন।
© নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত অথবা সম্মিলিতভাবে যেই কাজই করা হোক না কেন তা যেন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়। লক্ষ্য পূরণের জন্য যে ছোটো ছোটো উদ্দেশ্য দাঁড় করানো হয় সেই উদ্দেশ্যগুলোর যেন একটা সম্মিলিত নির্দিষ্ট আঙ্গিক থাকে। @ ব্যক্তির নিজের স্বার্থের চেয়েও সাধারণ স্বার্থের দিকে নজর যে কোন সংগঠনে ব্যক্তিগত স্বার্থ অনেক সময় প্রাধান্য পায়। এই ব্যক্তিগত স্বার্থ স্বাভাবিকভাবেই মূল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়াকে বাধা দেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক অথবা পরিচালকবৃন্দকে নজর দিতে হবে।
@ পারিশ্রমিক কর্মচারীর পারিশ্রমিক অবশ্যই তার যোগ্যতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ইত্যাদির সঙ্গে সামজ্ঞস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর স্বচ্ছ ও বিষয়ভিত্তিক চুক্তি থাকা দরকার। @ কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণঃ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের যদি নানান দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশি। বেশি করে অর্পণ করা হয় তবে তাকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। উল্টো দিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি ক্ষমতা ও দায়িত্ব নানান স্তরে ছড়িয়ে না দিয়ে নিজেদের কাছেই রেখে দেয় তবে তা কেন্দ্রীকরণ বলা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উৎপাদন, আয়তন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এর মাত্রা ঠিক করা। © ক্রমোচ্চ শৃঙ্খল: এর অর্থ প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদাধিকারী থেকে সর্বনিম্নস্থ পদাধিকারী পর্যন্ত
একটা ক্ষমতা বা অধিকার শৃঙ্খল। এই নীতি অনুযায়ী কোনো আদেশ, বার্তা অথবা কে ঘোষণা সবই এই শৃঙ্খল বরাবর সর্বনিম্ন পদাধিকারী থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারী
বিন্যাস সমস্ত ক্ষেত্রেই কাজের মধ্যে যে একটা সুচার বিন্যাস থাকে। সঠিক 6/43 সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে সঠিক ব্যক্তিই যেন ভারপ্তাপ্ত হয়। সুসামঞ্জস্য কর্মপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সঠিকভাবে সমস্ত দিকেই বিভিন্ন অংশ বিন্যস্ত থাকে এবং প্রয়োজনে আবার তারা একত্রীভূত হয়।
↑ সমদর্শিতা: সমস্ত কর্মীকেই যেন সমানভাবে দেখা হয়। কর্তৃপক্ষের যেন কোনো রকম নিজস্ব ভালোলাগাকে প্রাধান্য না দেওয়া হয়। এর ফলে সমস্ত স্তরের কর্মীদের মধ্যে একটা নৈকট্য তৈরি হয় যা আখেরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথকেই প্রশস্ত করে।
চাকরীর স্থায়ী নিরাপত্তা কর্মচারীর আগ্রহ, আকর্ষণ ইত্যাদি বাড়ানোর জন্য চাকরির স্থায়ী নিরাপত্তা দরকার। যদি তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। চাকরী যাবার ভয় প্রতি মুহূর্তেই থাকে। তবে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থির অবস্থায় তার পক্ষে কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব নয়,
প্রতি মুহূর্তেই নতুন চাকরির সন্ধানে সে ব্যাপৃত থাকে। উদ্যম প্রত্যেক কর্মচারীকে নিজস্ব চিত্তবাবনা করার ও সেই অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে, না হলে কর্মচারীর উদ্ভাবন ক্ষমতা বাধা প্রাপ্ত হবে। তাকে উৎসাহ দিতে হবে
প্রয়োজনে পুরস্কৃত করতে হবে। সমস্ত স্তরের কর্মীদের কাছ থেকেই মতামত নিতে হবে। তাদের কথাকে মর্যদা দিতে হবে। 0 দলীয় উদ্দীপনা কোনো প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মচারীবৃন্দ একটা দল হিসাবে কাজ করবে।
একে অপরের সাথে একটা আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। একতা থাকবে একটি সুনির্দিষ্ট
লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এবং একসঙ্গে যাতে সকলে এগোতে পারে কর্তৃপক্ষকে সেই দিকে নজর রাখতে হবে।
ফেওল বর্ণিত সমস্ত পরিচালনা নীতিসমূহ আজও প্রাসঙ্গিক। যদিও মূলত উৎপাদন শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দিকেই তাঁর নীতিসমূহ বেশি প্রযোজ্য তবুও একথা অনস্বীকার্য্য পরিষেবা কেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও উক্ত নীতি সমূহের প্রাসঙ্গিকতা বর্তমান ।
ক্রীড়া এবং শারীরশিক্ষা ক্ষেত্রে ফেওল বর্ণিত নীতিসমূহের ব্যবহারিক প্রয়োগের বিস্তারিত আলোচনায় দেখা যায়— ক্রীড়াক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্য বলতে সেই অর্থে কিছু নেই, যদিও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই এক্ষেত্রে পণ্য কিন্তু মূলত পরিষেবাকেন্দ্রিক এই পেশায় দুটি দিক থেকে পণ্যের গুণগত মান যাচাই করা যায়— যেমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষক বা শিক্ষিকার পেশায় নিযুক্ত হওয়া, অন্যদিকে সমাজের অন্যান্য সকল পরিসেবা ক্ষেত্রে যেমন প্রশিক্ষক, ফিজিক্যাল উনার, জিম ইনস্ট্রাক্টর বা পরিচালনা বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ।