জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও । জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ? জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পটভূমি উল্লেখ করো

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড । কারণ । প্রতিক্রিয়া । পটভূমি । ফলাফল । বিবরণ 

সূচনা : ব্রিটিশ সরকার 1919 খ্রিস্টাব্দে রাওলাট আইন নামে একটি নগ্ন দমনমূলক আইন পাশ করলে সারা ভারতে প্রতিবাদের ঢেউ বয়ে যায় । এই আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব প্রতিবাদ আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার আন্দোলন প্রতিহত করতে নিষ্ঠুর দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে । এই দমননীতির সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড   


জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ 

পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে 13 এপ্রিল 1919 খ্রিস্টাব্দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে । এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো ।


ডায়ারের নগ্ন শাসন : 11 এপ্রিলের (1919 খ্রিস্টাব্দে) পূর্বে কয়েকদিন পাঞ্জাবের অমৃতসর মোটামুটি শান্ত ছিল । কিন্তু সামরিক শাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল ও  ডায়ার অমৃতসরের শাসনভার গ্রহনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে । তিনি 12 এপ্রিল অমিতসরে নির্বিচারে গ্রেফতার শুরু করেন এবং সভা-সমিতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ।

আরোও জানতে : উচ্চমাধ্যমিক দর্শন প্রথম অধ্যায় সাজেশন 2023। দ্বাদশ শ্রেণী দর্শন প্রথম অধ্যায় সাজেশন 2023। যুক্তি অধ্যায় সাজেশন 2023

সমাবেশ : ডায়ার কর্তিক সভা-সমিতির ওপর নিষেধাজ্ঞার খবর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সর্বত্র প্রচারিত হয় নি । এই অবস্থায় কুখ্যাত রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকারের তীব্র দমন-পীড়ন প্রবৃত্তির প্রতিবাদে অমৃতসরের পূর্বদিকে অবস্থিত জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে পূর্বনির্ধারিত একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । 13 এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে প্রায় 10,000 নিরস্ত্র মানুষ যোগ দেয়। 

আরোও জানতে : Higher secondary English 2023 : দ্বাদশ শ্রেণী ইংরেজি অধ্যায় ভিত্তিক সাজেশন 2023 । দ্বাদশ শ্রেণী ইংরেজি রচনাধর্মী প্রশ্নের সাজেশন 

গুলিবর্ষণ : জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে সভা শুরু হওয়ার পর জেনারেল ডায়ার বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং আগে থেকে কোন সতর্কবার্তা না দিয়ে সেনাবাহিনীকে সমাবেশে জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন । পঞ্চাশটির রাইফেল থেকে অন্তত দশ মিনিট ধরে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চলে ।


হত্যালীলা : জালিয়ানওয়ালাবাগের সমাবেশ স্টলটি চারিদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। সভা স্থলে প্রবেশের জন্য মাত্র একটি  এবং সভাস্থল থেকে বেরোনোর চারটি সরু গলি পথ ছিল । ফলে অধিকাংশ মানুষ মাঠ থেকে দ্রুত পালাতে ব্যর্থ হয় । এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয় । সরু গলি পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে বহু লোকের মৃত্যু হয় । গুলিবর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু মানুষ প্রাচীর অতিক্রম করে কুয়োয় ঝাঁপ দেয় এবং সেখানে মারা যায় । সরকারি হিসেবে মৃত্যুসংখ্যা 379 জন এবং আহতের সংখ্যা 1200 জন । এই ঘটনা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড নামে পরিচিত ।

আরোও জানতে: উচ্চমাধ্যমিক ২০২৩ : দ্বাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যায়ভিত্তিক সাজেশন 2023

সান্ধ্য আইন : জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পর সরকার সান্ধ্য আইন নামে একটি আইন জারি করেন । এ আইনের মধ্যে বলা হয়েছিল যে কোন মানুষ তার বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না । তার ফলে শহরের কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাদের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে এতে আহত সেবা করতে পারেনি ।


জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া 

জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনায় সকল ভারতবাসীর কাছে প্রমাণিত হয় যে ব্রিটিশ শাসনের একটি নগ্ন রূপ । ব্রিটিশ সরকার গুলি চালানোর ঘটনা কে সমর্থন করেছিল । ভারতের সচিব মন্টেগু এই গুলি চালানো হত্যাকাণ্ডকে নিবারণ মূলক হত্যাকাণ্ড বলে নাম দিয়েছিল ।


ক্ষোভ বিক্ষোভ : জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সারা ভারত সকল মানুষ ক্রোধ ও ঘৃণায় ফেটে পড়ে । তাই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন – এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতের যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম এর ছড়িয়ে পড়ে সবাইকে আন্দোলিত করে । 


উপাধি ত্যাগ : জালিয়ানওয়ালাবাগের পৈশাচিক ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন । এছাড়া গান্ধীজি ও ব্রিটিশদের দেওয়া কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি ত্যাগ করেন । এ থেকে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গান্ধীজীর দেশের প্রতি কতটা ভালোবাসা ছিল ।


কংগ্রেসের প্রতিবাদ : জাতীয় কংগ্রেসে জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড কে তীব্র নিন্দা জানাই। কংগ্রেসের নেতা সিএফ এন্ড্রুজ এই ঘটনাকে কসাইখানার গনহত্যার নাম দেয় । ব্রিটিশ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে কংগ্রেস নিজের উদ্যোগে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন । এই কমিটি 1920 খ্রিস্টাব্দে 25 মার্চ তার রিপোর্টে হত্যাকাণ্ডের জন্য ডায়ারকে দায়ী কে দোষী সাব্যস্ত করে এবং শাস্তিদানের সুপারিশ করেন। 


জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পটভূমি উল্লেখ  

ব্রিটিশ সরকার 1919 খ্রিস্টাব্দে তীব্র দমনমূলক রাওলাট আইন পাশ করলে এই আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে প্রতিবাদ আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে । পাঞ্জাবের রাওলাট বিরোধী আন্দোলনে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও মর্মান্তিক ঘটনা ছিল 13 এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে একটি শান্তিপূর্ণ জামায়াতে ইংরেজ পুলিশের নির্বিচারে গুলী চালানো এবং এর ফলে অন্তত 1000 মানুষের মৃত্যু। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পটভূমি নিচে উল্লেখ করা হলো ।


পাঞ্জাবে নির্যাতন : জুলুম চালিয়ে যুদ্ধের জন্য পাঞ্জাব থেকে সেনা ও অর্থ সংগ্রহ বদর বিদ্রহ প্রতিরোধ প্রকৃতি উদ্দেশ্যে সরকার পাঞ্জাবের তীব্র দমন-পীড়ন  চালালে পাঞ্জাব ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । পাঞ্জাবের কর্মচ্যুত সেনাদের সমাবেশে এই ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে । এই অবস্থায় পাঞ্জাবের গর্ভনর মাইকেল ও ডায়ার অত্যাচারী শাসকের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড পরিণত করে ।


রাওলাট আইন : ভারতীয়দের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ এবং আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার 1919 খ্রিস্টাব্দে নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী রাওলাট আইন প্রবর্তন করে । এই নিষ্ঠুর দমনমূলক আইন এর বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে । এই আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাব বারুদের স্তূপে পরিণত হয় । 


অমিত সরে সামরিক শাসন : রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল ও ডায়ার এর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে শাসনভার তুলে দেওয়া হয় । এই বাহিনী ও মিসরের সামরিক আইন জারি করে 11 এপ্রিল শহরে জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ হয় ।

1. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কত খ্রিস্টাব্দে হয় ?

উত্তর: 13 এপ্রিল 1919 খ্রিস্টাব্দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে  

2.কাইজার-ই-হিন্দ কার উপাধি ?

উত্তর: গান্ধীজি 

3. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকার থেকে কোন উপাধি লাভ করেন ? 

উত্তর: নাইট উপাধি

4. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডে কতজন মারা যান ও কত জন আহত হন ?

উত্তর: মৃত্যুসংখ্যা 379 জন এবং আহতের সংখ্যা 1200 জন 

5.জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডে জন্য কে দায়ী ?

উত্তর: ডায়ার 

Leave a Comment