জীবন বিজ্ঞান জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 2023
1.অক্সিন হরমোনের দুটি বৈশিষ্ট্য ও তিনটি কাজ উল্লেখ করো
2.সাইটোকাইনিন হরমোনের উল্লেখযোগ্য কাজগুলি লেখো।
3.উদ্ভিদ হরমোনের তিনটি কাজ লেখো। সংশ্লেষিত হরমোনের কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ উল্লেখ করো
4.টেস্টোস্টেরনের উৎস ও কাজ লেখো। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।
5.থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের নাম লেখো। থাইরক্সিনের কাজ লেখো।
6.হাইপোথ্যালামাসকে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলে কেন?
7.ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ?
8.পাখির ডানার বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে ডানার ভূমিকা আলোচনা করো। উড্ডয়ন পালকের বৈশিষ্ট্য ও পাখির উড্ডয়নে পালকের ভূমিকা লেখো।
9.মানুষের দেহে কবজা এবং বল ও সকেট অস্থিসন্ধির অবস্থান ও গমনে ভূমিকা লেখো
প্রশ্ন : অক্সিন হরমোনের দুটি বৈশিষ্ট্য ও তিনটি কাজ উল্লেখ করো
উত্তর :
অক্সিন হরমোনের বৈশিষ্ট্য
অক্সিন হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
১.অক্সিন জলে দ্রাব্য নাইট্রোজেন-ঘটিত জৈব অম্ল।
২. অক্সিনের ক্রিয়া অন্ধকারে ভালো হয়। কারণ অক্সিন আলোকে জারিত হয়ে যায়।
৩. উদ্ভিদদেহে অক্সিনের প্রবাহ সব সময় মেরুবর্তী। অক্সিন কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন হয়ে ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নীচের দিকে পরিবাহিত হয়।
অক্সিন হরমোনের তিনটি কাজ :
অক্সিনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল—
১.বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ : অক্সিন অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে, একে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে। তাই অগ্রমুকুল কেটে দিলে গাছের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়াও, অক্সিন ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে এবং অঙ্গ-বিভেদ নিয়ন্ত্রণ করে।
আরোও পড়ুন ”- বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের সূত্র আবিষ্কার এর গল্প
২. কোশ বিভাজন ও কোশের বৃদ্ধি: অক্সিন DNA সংশ্লেষ বৃদ্ধি করে, নিউক্লিয়াসের বিভাজনে সাহায্য করে ও সাইটোকাইনিনের সহায়তায় সাইটোপ্লাজমের বিভাজনে সাহায্য করে। কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং গহ্বর সৃষ্টি করে কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে।
৩. ফল গঠন : পরাগযোগের পর ডিম্বাশয়ে অক্সিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও ডিম্বাশয় ফলে পরিণত হয়। তাই নিষেক ছাড়াই অক্সিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে বীজহীন ফল উৎপাদন করা হয়।
প্রশ্ন : জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি কী কী?
উত্তর :
জিবেরেলিন হরমোনের কাজ
উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের সক্রিয় প্রকারটি হল GA3, যা অঙ্কুরিত চারাগাছ, বীজ ও বীজপত্রে সংশ্লেষিত হয়। জিব্বেরেলিনের প্রধান ভূমিকাগুলি উল্লেখ করা হল।
আরোও পড়ুন ”- ভৌত বিজ্ঞান রাসায়নিক গণনা তৃতীয় অধ্যায় দশম শ্রেণী 2023
১. বীজের সুপ্তদশা ভঙ্গ: বীজের সুপ্তদশার শেষে জিব্বেরেলিন ভ্রূণ থেকে ক্ষরিত হয়ে বীজের অ্যালিউরোন স্তরের কোশ থেকে অ্যামাইলেজ নামক শর্করাভঙ্গক উৎসেচক সংশ্লেষ উদ্দীপিত করে। এই উৎসেচক বীজ মধ্যস্থ সস্যে বা বীজপত্রের জটিল শর্করাকে সরল ও দ্রবীভূত শর্করাতে পরিণত করে ভ্রূণের শ্বসনহার বৃদ্ধি করে যা বীজের সুপ্তদশা দূর করে অঙ্কুরোদ্গমের সূচনা করে।
২. পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের বংশগত খর্বতা দূর করে। জিব্বেরেলিন জিনের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে পর্বমধ্যের কোশ বিভাজনে উদ্দীপনা জোগায় ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে।
৩. ফলের বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিন ফল গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যা বিজ্ঞানী ডেনিসের পরীক্ষায় প্রমাণিত। এই হরমোন বীজহীন বা পার্থেনোকার্পিক ফল (আপেল, আঙুর, কলা) গঠনে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, গাছের পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিন সাহায্য করে।
প্রশ্ন : সাইটোকাইনিন হরমোনের উল্লেখযোগ্য কাজগুলি লেখো।
সাইটোকাইনিনের কাজ
উদ্ভিদদেহে সাইটোকাইনিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি হল :-
১. কোশ বিভাজন: সাইটোকাইনিন কোশচক্রের ইনটারফেজের ‘S’ দশায় নিষ্ক্রিয় কাইনেজকে সক্রিয় করে DNA- সংশ্লেষ ও সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিসে সাহায্য করে।
২. জরা বিলম্বিতকরণ: সাইটোকাইনিন কোশের ক্লোরোফিল, প্রোটিন এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের বিনাশ বিলম্বিত করে জরা রোধ করে।
৩. পত্রমোচন বিলম্বিতকরণ: পাতার পত্রমূলের গোড়ার কোশগুলির কোশপ্রাচীরের ক্ষয়ের কারণে পত্রমোচন হয়। সাইটোকাইনিন এই কোশগুলির কোশপ্রাচীরকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে পত্রমোচন বিলম্বিত হয়।
প্রশ্ন : উদ্ভিদ হরমোনের তিনটি কাজ লেখো। সংশ্লেষিত হরমোনের কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ উল্লেখ করো
উদ্ভিদ হরমোনের তিনটি কাজ
উদ্ভিদ হরমোনের তিনটি কাজ হল—
১] অগ্র ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি: উদ্ভিদ হরমোন অগ্রসস্থ ও পার্শ্বীয় ভাজক কলার বিভাজন ত্বরান্বিত করে অগ্র ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
২] ফুলের প্রস্ফুটন: উদ্ভিদ হরমোন পুষ্পমুকুলের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে ফুল ফুটতে সাহায্য করে।
৩] বীজের অঙ্কুরোদ্গম: বিভিন্ন কারণে বীজের সুপ্তদশা দেখা যায়। হরমোন উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে অঙ্কুরোদ্গমে সাহায্য করে।
কৃষিক্ষেত্রে সংশ্লেষিত হরমোনের প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম হরমোনের ব্যাপক প্রয়োগ দেখা যায়
যেমন—
১] শাখা কলমের দ্বারা নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি: IBA, NAA প্রভৃতি সংশ্লেষিত অক্সিন প্রয়োগ করে গোলাপ, আম, লেবু, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকার শাখা কলম থেকে মূল সৃষ্টি করে দ্রুত নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা যায়।
২] আগাছানাশ করা: 24-D, MCPA প্রভৃতি কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করে ধান গম প্রভৃতি শস্যক্ষেত্র থেকে দ্বিবীজপত্রী আগাছা নির্মূল করা হয়।
৩] অন্যান্য ব্যবহার: এ ছাড়া পার্থেনোকার্পিক ফল (টম্যাটো, পেয়ারা, কলা) সৃষ্টি করতে, অপরিণত আম, আঙুর, কলার মোচন রোধ করতে অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন উদ্ভিদ হরমোন ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : টেস্টোস্টেরনের উৎস ও কাজ লেখো। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।
উত্তর : টেস্টোস্টেরনের উৎস ও কাজ
টেস্টোস্টেরনের উৎস ও কাজ নীচে আলোচনা করা হল।
উৎস: শুক্রাশয়ে অবস্থিত লেডিগের আন্তর কোশ থেকে টেস্টোস্টেরন ক্ষরিত হয়।
কাজ:
টেস্টোস্টেরনের কাজগুলি হল –
১] বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষ দেহের যৌনাঙ্গের গঠনগত পূর্ণতা দানে সাহায্য করে এবং শুক্রাণু উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
২] পুরুষালি গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য, যেমন—ভারী কণ্ঠস্বর, গোঁফ-দাড়ি, পেশিবহুল দেহ প্রভৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
৩] মৌল বিপাকীয় হার বা BMR ও RBC উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
৪] পেশি ও অস্থির বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন : থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের নাম লেখো। থাইরক্সিনের কাজ লেখো।
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের নাম
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন (T3) এবং টেট্রা-আয়োডোথাইরোনিন (T4) বা থাইরক্সিন ক্ষরিত হয়।
থাইরক্সিন হরমোনের কাজ
থাইরক্সিন হরমোন মানবদেহে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে সাহায্য করে। যেমন—
১. BMR বা বেসাল মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে।
২. কলাকোশে গ্লুকোজের জারণ ঘটিয়ে শক্তির মুক্তি ঘটায়, তাই একে তাপ উৎপাদক বা ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে।
৩.দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও পূর্ণতা প্রাপ্তিতে সাহায্য করে।
৪. হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করতে ও লোহিত রক্তকণিকার ক্রমপরিণতিতে সাহায্য করে।
৫. প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সাহায্য করে, অস্থি থেকে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসকে মুক্ত করে।
প্রশ্ন : হাইপোথ্যালামাসকে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলে কেন?
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর :হাইপোথ্যালামাসকে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলার কারণ
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত রিলিজিং এবং ইনহিবিটিং ফ্যাক্টর বা নিউরোহরমোনগুলি অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত হরমোনগুলির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য যে, পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়। প্রভুগ্রন্থির ওপরে হাইপোথ্যালামাস ক্রিয়াশীল হয় বলে, একে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলে।
যেমন—হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (CRH) ও গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন (GHRH) পিটুইটারির নির্দিষ্ট কোশ থেকে ACTH ও গ্রোথ হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কি
যখন কোনো হরমোনের ক্ষরণ অন্য গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে, নিঃসৃত হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে। যেমন—থাইরক্সিনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ। হাইপোথ্যালামাসের নিয়ন্ত্রণে TRH-এর ক্ষরণ হয়। এর ফলে অগ্র পিটুইটারি থেকে TSH থাইরয়েড গ্রন্থিতে রক্তের মাধ্যমে পৌঁছোয় ও থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে T4 ও T3-এর ক্ষরণ ঘটায়। আবার, রক্তে T4, T3-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে TRH ও TSH-এর ক্ষরণ হ্রাস পায়, ফলে T4, T3-এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ঋণাত্মক ফিডব্যাক পদ্ধতি বলে। একইভাবে T4, T3-এর মাত্রা কমে গেলে আবার TRH ও TSH-এর ক্ষরণ বৃদ্ধির দ্বারা T4, T3-এর ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। একে ধনাত্মক ফিডব্যাক পদ্ধতি বলে।
প্রশ্ন : মানুষের দেহে কবজা এবং বল ও সকেট অস্থিসন্ধির অবস্থান ও গমনে ভূমিকা লেখো।
উত্তর :কবজা বা কপাট অস্থিসন্ধি :
কবজা বা কপাট অস্থিসন্ধির অবস্থান ও গমনে ভূমিকা নীচে আলোচনা করা হল।
অবস্থান: এই ধরনের অস্থিসন্ধি কনুইতে ও হাঁটুতে দেখা যায়। কনুইতে হিউমেরাস ও রেডিয়াস আলনা অস্থির মধ্যবর্তী অংশে এবং হাঁটুতে ফিমার ও টিবিয়া-ফিবিউলার মধ্যবর্তী অংশে এই অস্থিসন্থি দেখা যায়। ভূমিকা: কবজা সন্ধিতে অস্থি দুটির প্রান্ত দরজার কবজার মতো সংলগ্ন থাকে। এক্ষেত্রে একটি অস্থির গোলপ্রান্ত অপর অস্থির অবতল অংশে যুক্ত থাকে। অস্থি দুটির একটি অক্ষেই 180°-তে বিচলন ঘটে। ফলে ফ্লেক্সন ও এক্সটেনশন সম্ভব হয় যা মানুষের দ্বিপদ গমনে সহায়তা করে। বল ও সকেট অস্থিসন্ধি
প্রশ্ন : বল ও সকেট অস্থিসন্ধির অবস্থান ও গমনে ভূমিকা আলোচনা করা হল।
অবস্থান: এই জাতীয় সন্ধি মানুষের কাঁধে ও কোমরে দেখা যায়। কাঁধে হিউমেরাসে ও স্ক্যাপুলার মধ্যবর্তী অংশে এবং কোমরে বা নিতম্বে ফিমার ও শ্রোণিচক্রের মধ্যবর্তী অংশে এই জাতীয় অস্থিসন্ধি উপস্থিত। ভূমিকা: এই অস্থিসন্ধিতে একটি অস্থির গোলাকার মস্তক অপর অস্থির কাপের মতো সকেট বা কোটরে প্রবিষ্ট থেকে পরস্পর সংলগ্ন হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকে অস্থিসন্ধির সঞ্চালন ঘটে। ফলে ফ্লেক্সন, এক্সটেনশন, রোটেশন, অ্যাবডাকশন প্রভৃতি দেখা যায় যা মানুষের গমনের ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের সঞ্চালনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন : পাখির ডানার বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে ডানার ভূমিকা আলোচনা করো। উড্ডয়ন পালকের বৈশিষ্ট্য ও পাখির উড্ডয়নে পালকের ভূমিকা লেখো।
উত্তর :ডানার বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে ভূমিকা
পাখির ডানার বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে তাদের ভূমিকা আলোচনা করা হল।
বৈশিষ্ট্য: পাখির ডানা অগ্রপদের রূপান্তরিত রূপ। এর উড্ডয়ন সহায়ক বৈশিষ্ট্য –
[1] ডানার দেহসংলগ্ন অংশটি চওড়া ও পিছনের অংশটি সরু।
[2] ডানার ওপরের তল উত্তল ও নীচের তল অবতল।
[3] ডানার সাথে উন্নত বক্ষপেশি পেক্টোরালিস মেজর, পেক্টোরালিস মাইনর ও কোরাকো ব্রাকিয়ালিস যুক্ত থাকে।
ভূমিকা: পাখি ডানার সাহায্যে ওপর থেকে নীচে বাতাসে চাপ প্রয়োগ করে বাতাসের ঊর্ধ্বগতিকে কাজে লাগিয়ে বাতাসে ভেসে থাকতে সক্ষম হয়। ডানার সাথে সংযুক্ত বক্ষপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ডানার অবনমন, উত্তোলনে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, ডানার বিশেষ আকৃতির জন্য পাখিরা সহজেই বাতাসের বাধা অতিক্রম করতে পারে।
উড্ডয়ন পালকের বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে ভূমিকা
নীচে পাখির উড্ডয়ন পালকের বৈশিষ্ট্য ও উড্ডয়নে তাদের ভূমিকা আলোচনা করা হল।
বৈশিষ্ট্য: [1] পাখির দেহে উড্ডয়নে সহায়তাকারী দুই ধরনের পালক বর্তমান। এরা মূলত ডানা ও ল্যাজে উপস্থিত থাকে। [2] এই পালকগুলি লম্বা এবং বার্ব, বার্বিউল ও হুকযুক্ত হওয়ায় বায়ুর চাপে ছিঁড়ে যায় না। [3] সাধারণত পাখির ডানায় 23টি রেমিজেস পালক ও ল্যাজে 12টি রেক্ট্রিসেস পালক থাকে।
ভূমিকা: [1] ডানার পালক বা রেমিজেস ডানার তল বৃদ্ধি করে বাতাসে ঝাপটা দিতে ও ভেসে থাকতে সাহায্য করে। [2] ল্যাজের 12টি রেক্ট্রিসেস দিক পরিবর্তনে ও গতিরোধে সাহায্যে করে। [3] এ ছাড়াও পালক দেহের তাপমাত্রা সংরক্ষণে ও দেহ হালকা করতে সাহায্য করে।