ধর্মীয় গোষ্ঠীর সামাজিক ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের মধ্যেই বসবাস করে। তারা একাকী জীবন কাটাতে পারে না, তাই নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। গোষ্ঠী জীবনের সুবিধা সকল জনগণ লাভ করে থাকে। প্রতিটি ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যকলাপ সম্পাদিত হয় সামাজিক গোষ্ঠীর সাহায্যে। কয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়কে বলা হয় গোষ্ঠী।
সমাজতত্ত্ববিদ বটোমোর (Bottomore)-এর মতে, সামাজিক গোষ্ঠী হল একটি সাংগঠনিক কাঠামোর
মধ্যে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক মানবগোষ্ঠী।
ম্যাকাইভার ও পেজ বলেছেন, “By group, we mean any collection of human beings who are brought into social relationship with one another.” এককথায় গোষ্ঠী বলতে এমন একটি উদ্দেশ্যভিত্তিক সংগঠিত ও পরস্পর সম্পর্কিত মনুষ্য সমষ্টিকে বোঝায়, যাদের মধ্যে গোষ্ঠী চেতনার স্বাতন্ত্রতা দেখা যায় এবং সহজেই সামাজিক নানান প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
উদাহরণ : পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, খেলার দল, অন্তরঙ্গগোষ্ঠী,
ক্রেতা-বিক্রেতা, গ্যাং, শ্রমিক সংঘ প্রভৃতি।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তা হল – (1) দৈহিক নৈকট্য প্রাথমিক গোষ্ঠীর একটি বৈশিষ্ট্য হল দৈহিক নৈকট্য। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে
প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
(2) গোষ্ঠীর আয়তন প্রাথমিক গোষ্ঠীর আয়তন অনেক ছোটো, ফলে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অন্তর্য
সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
(3) স্থায়িত্ব প্রাথমিক গোষ্ঠীর স্থায়িত্ব অনেক বেশি। এই গোষ্ঠী সদস্যদের মধ্যে বংশগত সম্পর্ক থাকে। এবং আয়তন সীমিত হওয়ায় এর স্থায়িত্ব দীর্ঘ সময় হয়।
(4) ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঃ প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ফলে সম্পর্কের বন্ধন অনেক বেশি দৃঢ় হয়।
(5) অভিন্ন উদ্দেশ্য : এই গোষ্ঠীর সদস্যরা উদ্দেশ্য ও মনোভাবের দিক থেকে অভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
(6) সদস্যপদ অনৈচ্ছিক ঃ এই গোষ্ঠীর সদস্যপদ অনৈচ্ছিক, কারণ জন্মেই এই গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে থাকে। (7) সম্পর্কের স্বকীয় মূল্য : প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্কের মধ্যে স্বার্থচেতনা থাকে না। তাই এই গোষ্ঠীর সম্পর্কের মধ্যে স্বকীয় মূল্য রয়েছে।
(৪) নিয়ন্ত্রণ : প্রাথমিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ বয়স্ক সদস্যদের দ্বারা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, বড়োরা ছোটোদের
সবকিছু সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। তাই প্রাথমিক গোষ্ঠী অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ। সুতরাং, প্রাথমিক গোষ্ঠী হল সমাজের এমন একটি গোষ্ঠী যা প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সম্পর্কের ভিত্তিতে
সংগঠিত হয়ে থাকে।
B. সমাজিক গোষ্ঠীর গুরুত্ব :
সামাজিক গোষ্ঠী সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, কারণ এখান থেকে শিশু সমাজের প্রাথমিক বিষয়গুলি আয়ত্ত করে এবং পরিপূর্ণ সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠে। প্রাথমিক গোষ্ঠীর শিক্ষাগত গুরুত্ব হল
(1) সামাজিকীকরণের শিক্ষা : প্রাথমিক গোষ্ঠী থেকে শিশু সামাজিকীকরণের শিক্ষা লাভ করে। অর্থাৎ, সামাজিক আচার-আচরণ, রীতিনীতি, প্রথা, লোকাচার, লোকনীতি ইত্যাদি সামাজিক বিষয়গুলির শিক্ষা লাভ করে।
(2) সু-অভ্যাস গঠন : প্রাথমিক গোষ্ঠী থেকে শিশুর সু-অভ্যাস গঠিত হয়ে থাকে। এই সময় শিশুর মন থাকে নমনীয় ফলে শিশুর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠন করা অনেক সহজ হয়। (3) মানসিক বিকাশ ঃ এই গোষ্ঠী শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর চিন্তাশক্তি,
কল্পনাশক্তি, মনোভাব গঠন ইত্যাদির বিকাশে সাহায্য করে। (4) ভাষা বিকাশ : শিশুর ভাষার বিকাশে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলে শিশুর ভাষাশিক্ষা
শুরু হয় প্রাথমিক গোষ্ঠী থেকে। (5) প্রাক্ষোভিক বিকাশ : প্রাথমিক গোষ্ঠীতে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো বাধা, জড়তা বা ভয়ের কোনো জায়গা থাকে না, ফলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে।
(6) নৈতিক বিকাশ ঃ প্রাথমিক গোষ্ঠী শিশুর মধ্যে নৈতিক বিকাশে সাহায্য করে, শিশুকে ন্যায়নীতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। (7) মূল্যবোধের বিকাশ : শিশুর মধ্যে সহযোগিতাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতিবোধ প্রভৃতির মাধ্যমে
মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। (৪) বৃত্তিশিক্ষা : শিশুর বৃত্তিশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেক পরিবার রয়েছে তারা পারিবারিক বৃত্তি অবলম্বন করে জীবিকানির্বাহ করে।