আর্কিমিডিসের সূত্র আবিষ্কার এর গল্প । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস এর জীবনী । আর্কিমিডিস এর সূত্র । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস মজার গল্প । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস কোথায় জন্ম গ্রহণ করেন । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস বিজ্ঞানী হওয়ার গল্প । Archimedes biography in Bengali ।
বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের জীবনী (Archimedes biography in Bengali)
আজ অনেকদিন আগেকার কথা । গ্রীস দেশের সাইরা কিউস নামে একটা ছোট্ট রাজ্য ছিল । আর সেখানকার রাজার নাম ছিল হিয়ারো ।
হিয়ারও রাজার স্বভাব ছিল ভীষণ খামখেয়ালে ও খুঁতখুঁতে ধরনের । তিনি কাউকে সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারতেন না ।
রাজা হিয়ারও মাথায় যে মুকুটটি পড়ে থাকতেন সেই মুকুট রাজার একেবারে পছন্দ ছিল না । তাই তিনি একদিন ঠিক করলেন যে তার একটা নতুন মুকুট তৈরি করবেন ।
কিন্তু কিছুতেই চিন্তা করে ঠিক করতে পারছিলেন না এ কাজের দায়িত্ব কাকে দেবে । কারণ রাজা কাউকেই ভালোভাবে বিশ্বাস করতে পারতেন না । অনেকদিন ভাবনা চিন্তা করার পর তার রাজ্যের সবচেয়ে ভালো স্যাকরাকে তিনি ডেকে পাঠালেন ।
বুড়ো সেক্রা খবর পেয়ে রাজার কাছে ছুটে এলেন । রাজা হিয়ারও তাকে কোনদিন দেখেনি । তাই তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কে । তখন সে বুড়ো স্যাকরা তার পরিচয় দিলেন ।
আরোও পড়ুন :’ দশম শ্রেণী জীবনবিজ্ঞান জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় প্রথম অধ্যায় 2023
হুজুরের আদেশ পেয়ে ছুটে এসেছি।’ রাজামশাই বুড়ো স্যাকরাকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন,
‘সাতদিনের মধ্যে আমার একটা সোনার মুকুট চাই। তবে যেমন তেমন হলে চলবে না কিন্তু। সে মুকুট এমন সুন্দর হবে যে, পৃথিবীর কোনো রাজাই এখন পর্যন্ত তা চোখেই দেখেনি। বুড়ো স্যাকরা রাজামশাইয়ের কথা শুনে হেসে বললেন, ‘মহারাজ এ এমন কী শক্ত কাজ। হুজুর যাতে খুশি হন, তার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
রাজামশাই বুড়ো স্যাকরাকে বললেন, ‘মনে থাকে যেন, সময় কিন্তু মাত্র সাতদিন। নাহলে তোমার কিন্তু গর্দান যাবে।” রাজাকে প্রণাম করে বুড়ো স্যাকরা চলে গেলেন।
সাতদিন পর বুড়ো স্যাকরা রাজামশাইয়ের জন্য একটা সুন্দর মুকুট বানিয়ে আনলেন। রাজসভায় যারা বসেছিল তাদের সবাই চোখ একেবারে ধাঁধিয়ে গেল। বুড়ো স্যাকরাকে সবাই খুব প্রশংসা করল। মুকুট দেখে রাজামশাইও খুব খুশি হলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে হল, স্যাকরা সোনার সঙ্গে খাদ মেশায়নি তো? এই নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। পরদিন সকালে রাজামশাই মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, “আচ্ছা কালকে বুড়ো স্যাকরা আমার জন্য যে সোনার মুকুটটা বানিয়ে এনেছে সেটা পরীক্ষা করে একবার দেখুন তো সোনাটা খাঁটি কিনা?”
মন্ত্রী রাজামশাইয়ের কথা সায় দিলেন। তারপর রাজামশাই মন্ত্রীকে আবার বললেন, ‘দেখবেন মুকুটের সোনা খাঁটি কিনা দেখতে গিয়ে মুকুটটা আবার ভেঙে ফেলবেন না। মুকুটটা কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
রাজামশাইয়ের কথা শুনে মন্ত্রীমশাই মহাচিন্তায় পড়লেন। তারপর বললেন, “হুজুর আমি তো সোনাদানার কারবার করি না। আমি কি সোনার খাদ বুঝতে পারব?”
মন্ত্রীর কথা শুনে রাজা ভেবে দেখলেন সত্যিই তো এ কম্ম তো মন্ত্রীর নয়। তাই তিনি রাজ্যের সব পণ্ডিতদের ডেকে পাঠালেন। রাজসভায় একে একে সব পণ্ডিতেরা এসে হাজির হলেন। বুড়ো স্যাকরার তৈরি সোনার মুকুট দেখে সব পণ্ডিতেরাই স্যাকরার প্রশংসায় মুখিয়ে উটলেন।
পণ্ডিতদের এসব কাণ্ডকারখানা দেখে রাজামশাই খুব বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘বুড়ো স্যাকরার প্রশংসা করবার জন্য আপনাদের এখানে ডেকে আনা হয়নি। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাইছি যে, ওই মুকুটের সোনাটা কতটা খাঁটি?” রাজামশাইয়ের কথা শুনে পণ্ডিতেরা রীতিমতো ভাবনায় পড়ে গেলেন। সবাই মিলে অনেকক্ষণ ধরে নানারকম আলোচনা করেও রাজার মুকুটের সোনা খাঁটি কিনা, তা বের করতে পারলেন না।
তারপর এক পণ্ডিত রাজমশাইকে বললেন, “এ বড় কঠিন কাজ মহারাজা। এ যে সে লোকের কাজ নয়, একমাত্র বিজ্ঞানীরাই হয়তো এর সমাধান করতে পারবেন।”
রাজামশাই অবশেষে তাঁর এক বিজ্ঞানী বন্ধু আর্কিমিডিসকে ডেকে পাঠালেন।
রাজামশাইয়ের সব কথা শুনে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস তো একেবারে অবাক হলে গেলেন। কেন না খাঁটি সোনার চেনার উপায় তাঁর জানা ছিল না। তবুও তিনি সরাসরি রাজাকে না বলতে পারলেন না। কেননা তিনি রাজমশাইকে বেশ ভালোভাবেই চিনতেন। ‘না’ বললে হয়তো আর্কিমিডিসের গর্দানটাই চলে যাবে।
বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস রাজাকে বললেন, “মুকুটের সোনা খাঁটি কিনা? তার বের করবার বিদ্যে এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। তবে দু-চারদিন সময় পেলে অবশ্য একটা উপায় আমি নিশ্চয়ই বের করে ফেলতে পারব।”
বিজ্ঞানীর কথা শুনে রাজামশাই একটু চিন্তা করে নিয়ে বললেন, “ঠিক আছে আমি তোমাকে একমাস সময় দিলাম। এর মধ্যে যদি তুমি কোনো কিছু না করতে পার তাহলে কিন্তু তোমার গর্দান যাবে।”
আর্কিমিডিস রাজার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তারপর থেকে শুরু হল চিন্তা। কী করে ওই সোনার মুকুটের সোনা খাঁটি কিনা তা বের করা যাবে। এভাবে একটা একটা করে দিন চলে যেতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই তার সমাধান বের করতে পারছিলেন না বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। . আর্কিমিডিসের দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে লাগল। সে কী ভাবনা। খেতে বসলে ভাবনা, এমন কী কোনো লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেও অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস।
প্রতিদিন আর্কিমিডিস একটা বড় চৌবাচ্চার জলে স্নান করতেন। একদিন স্নান করতে করতে সোনার মুকুটের কথা আর্কিমিডিস ভাবছিলেন।
চৌবাচ্চার জলের দাগের ওপর আর্কিমিডিসের হঠাৎ চোখ পড়ে। স্নানের আগে জলের দাগ যেখানে ছিল এখন তা অনেকটা উপরে উঠে এসেছে। এমনকি নিজের শরীরটাও তাঁর বেশ হালকা বলে মনে হচ্ছে। তিনি তখন মনে মনে ভাবলেন, কোনো বস্তুকে জলে ডোবালে সে কিছু না কিছু জল অপসারণ করবেই। এই অপসারিত জলের ওজন আর বস্তুর ওজনের তুলনা করলেই বস্তুর ঘনত্ব পাওয়া যাবে।
এভাবেই সোনার মুকুটে খাদ মেশানো আছে কিনা তার উপায় বের করার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। একথা ভেবে আর্কিমিডিস আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। স্নানের কথা তিনি তখনকার মতো ভুলে গিয়ে ওই ভিজে অবস্থাতেই তিনি ‘ইউরেকা ইউরেকা’ বলে চিৎকার করতে করতে রাজামশাইয়ের কাছে ছুটে গেলেন।
রাজামশাইকে আর্কিমিডিস বললেন, বুড়ো স্যাকরার তৈরি সোনার মুকুট, জল ভর্তি পাত্র ও পরিমাণ খাঁটি সোনা দিন। আমি আপনার মুকুটের সোনার খাদের পরিমাণ এখুনি বের করে দেব।
রাজামশাই মন্ত্রীকে বলে সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিলেন। এবার আর্কিমিডস সোনার মুকুটটি নিয়ে ওজন করলেন, তারপর সেটিকে জালে ডুবিয়ে তার অপসারিত জলের ওজন নিলেন এবং এই দুই ওজনের তুলনা করে ঘনত্ব বের করলেন মুকুটটির এবার ওই খাঁটি সোনাকে ওজন করে, জলে ডুবিয়ে তার অপসারিত জলের ওজন করে সোনার ঘনত্ব বের করলেন। এভাবে তিনি খাঁটি সোনার ঘনত্বের সঙ্গে মুকুটের সোনার ঘনত্বের তফাৎ দেখিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে বুড়ো স্যাকরার তৈরি সোনার মুকুটে খাদ মেশানো আছে।
অতি সহজেই রাজার মুকুটের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস সেই সঙ্গে আবিষ্কার করলেন এক সূত্র
“কোনো বস্তুকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জলে বা অন্য কোনো তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তু তার নিজ আয়তনের সমান জল বা তরল অপসারণ করে। নিমজ্জিত করার ফলে বস্তুর যে পরিমাণ ওজন হ্রাস পায়, অপসারিত জলের ওজন ঠিক ততখানি।”
এই সত্য আবিষ্কারের ফলে আর্কিমিডিস আজও অমর হয়ে আছেন।
বেশ কয়েক হাজার বছর সময় পার হয়ে গেছে, তবুও তার দেওয়া সূত্রের এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। অথচ একটি সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবিষ্কৃত হয়েছিল আর্কিমিডিসের এই অভিনব সূত্রটি।
এই ধরনের সকল বিখ্যাত মণীষীদের জীবনী ও গল্প পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন । এছাড়া মাধ্যমিক, একাদশ শ্রেণী , দ্বাদশ শ্রেণী সকল বিষয়ের সাজেশন ও নতুন নতুন প্রশ্ন পত্র পেতে আমাদের গ্রুপ এ যুক্ত হন।
আমাদের গ্রুপ – bangla news