রাজনীতি চর্চার উত্তর আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি :
আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভবের অন্যতম কারণ ছিল সাবেকি মূল্যবানসাপেক্ষ, প্রাতিষ্ঠানিক, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক রাজনীতিচর্চার বিলোপ ঘটিয়ে মূলামানিরপেক্ষ, অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমৃদ্ধ রাজনীতিচর্চার সূচনা করা। আচারণবাদী তাত্ত্বিকগণ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর রাজনৈতিক আচরণকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এবং রাজনীতির রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংকীর্ণ পরিধিকে অতিক্রম করে ক্ষমতা, মূল্যবটন, সিদ্ধা প্রভৃতি বিষয়গুলির উপরে গুরুত্ব দেন। শাসনপ্রক্রিয়ার সলো বাতি বা গোষ্ঠীর সব রকমের কাজকর্মকেই রাজনৈতিক আচরণ বলে ডেভিড মোন মনে করেন। হ্যান্ড ল্যাসওয়োগ-এর রচনায় ক্ষমতার বিষয়টি ডেভি ইসন এর রচনায় মানের কর্তৃত্বসম্পন্ন করানো নিয়টি রাজনীতির মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়। এই ধরনের বিষয়গুলি যেহেতু যে কোন সমাজ সংগঠনেই লক্ষ্য করা যায়, সেহেতু রাষ্ট্রের পরিবর্তে যে কোন সমাজ-সংগঠনই আদর্শবাদী আলোচনার ক্ষেত্র। রাষ্ট্রের পরিবর্তে এ কারণে রাজনৈতিক ব্যবস্থা শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হতে থাকে। দ্বিতীয়ত, আচরণবাদী তাত্ত্বিক রাজনীতিচর্চাকে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করতে চেয়েছেন। প্রকৃতিবিজ্ঞানের সুরগুলি এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে রাজনীতি শুধু হয়। রাজনীতি-বিজ্ঞানীগণ পর্যবেক্ষণ, তথ্যসংগ্রহ, পরিসংখ্যান, বিশ্লেষণ প্রমাণ প্রভৃতি বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তৃতীয়ত, আচরণবাদী তাত্ত্বিকগণ রাজনীতির বিশ্লেষণে মূল্যবোধের বিষয়টি বর্জন করতে চেয়েছেন এবং পরিবর্তে রাজনীতিবিজ্ঞানকে তথ্যনিষ্ঠ মূল্য নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। চতুর্থত, আচরণবাদী তাত্ত্বিকগান সামাজিক বিজ্ঞানগুলির আন্তঃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ব্যপ্তি-আচনান তথা রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য মনস্তত্ব, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি সমাজবিজ্ঞানের শাখাগুলির মূলসূত্রগুলিকে কাজে লাগাতে হবে। এ ব্যাপারে ডেভিড ইটন মন্তব্য করেন, একটি সমাজের সামগ্রিক মুল্যবোরোতে গেলে রাজনীতিবিজ্ঞানকে অন্যান্য সামাজিক
সাহায্য নি ডেভিড ইস্টন আগাশবাদের আটটি বৈশিষ্টের উল্লেখ করেন। সেগুলি হ’ল- (১) আবাদের নিয়ম অনুসন্ধান (২) সত্যতা প্রমাণ (৩) শৃঙ্খলাবদ্ধ গবেষণা পদ্ধতি (1) পরিমাপ পদ্ধতির ব্যবহার। (৫) মূল্যমান
19
নিরপেক্ষতা (ড) বষণা প্রণালীর উদ্ভব (৭) বিপুল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব রচনা এবং (৮) সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন শাখার সলো সংহতিসাধন।
আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবে রাজনীতিচর্চায় কতকগুলি বিশ্লেষণ ধারা পাশ ও ঘাটের দশকে বিশেষ প্রাধান্য বিস্তার করে। এই বিশ্লেষণ ধারাগুলি হ’ল ডেভিড ইস্টা এর ব্যবস্থাপক বিশ্লেষণ ধারা (system Analysis), আলম (Almond), কোলম্যান (Coleman), পাওয়েল (Powell) প্রমুখ তাত্ত্বিক কাঠামো বিশ্লেষণধারা (Structural Functional Analysis), ডেভিড মান ( David Truman), ডেভিড আস্টার (David Apter) প্রমুখ তাত্ত্বিকদের গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বিশ্লেষনধারা (Group : Analysis), (Kart Dertsch) এর যোগাযোগ (communication theory) |
সীমাবদ্ধতা সত্তরের দশকে আচলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত, পদান ও ষাটের দশক হ’ল আচরণবাদের সুবর্ণযুগ এবং পরবর্তী দশক থেকেই শুরু হয় আচরণবাদের প্রতি বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া, এমনকি আচরণবাদের সমর্থক ডেভিড ইস্টন আবাদের সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সোচ্চার হ
বাণী সৃষ্টিকলির যে সমস্ত সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করা হয় তা হল নিম্নস্তূপ (১) আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পদ্ধতি সর্বস্বতা (2) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির নামে মুল্যমাননিরপেক্ষতা, ব্যক্তি সমাজজীবনের বিশ্লেষণে আদৌ সম্ভবপর নয়। (৩) রক্ষণশীলতা তথা বিদ্যমান পুঁজিবাদী কাঠামো ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার প্রবণতা (8) রাজনীতির মূল ধারণাগুলি, যথা, স্বাধীনতা, সাম্য, আনুগত্য,
বিদ্রোহ প্রভৃতি বিষয়গুলির গুরুত্বহীনতা (৫) ইতিহাসনিরপেক্ষতা (৬) লক্ষ্যহীনতা (1) সমাজ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা
করার অক্ষমতা প্রভৃতি।
১৯৭০ এর দশক থেকেই আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপরোক্ত সীমাবদ্ধতারা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে থাকে। স্বাধীনতা, সামা, আনুগত্য, সার্বভৌমিকতা প্রকৃতি ধারণাগুলি, মা আচরণবাদীরাও সাবেকি কলে বনি করেছেন, পুনরায় রাজনীতিচর্চায় বিবেচিত হতে থাকে। “সত্তরের দশকে জন (John Rawls) A Theory of Justice, a (Robert Nowzack)- Anarchy State and Utopia fro এর দশকে ছাতক কানিংহাম (Frank Cunningham) Democratic Theory and Socialism প্রভৃতি প্রশ্নগুলি আলোগবাদীতত্ত্বের সীমাবদ্ধতাগুলি কাটিয়ে রাজনীতিবিশ্লেষণে পুনরায় দার্শনিক ও মূল্যমান দৃষ্টিভি গ্রহণ করে। যদিও তাঁদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিরও পার্থক্য যথেষ্টই ছিল। অবশ্য সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ভার্জিনিয়া গোষ্ঠীর নির্বাচকমণ্ডলী, সরকারী কর্মচারী, প্রাধান্যবিস্তারকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, রাজনীতিবিদদের আচরণ প্রভৃতি বিশ্লেষণে আচরণবাদী দৃষ্টিভলি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই নুতন দৃষ্টিভঙ্গিকে Public choice approach न Rational choice approach নামে অভিহিত করা হয়। প্রবকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডাউনস (Downs), মন (Olson) এবং নিকान (Niskanen)। এই সমস্ত তাত্বিকগণ রাজনীতির বিশ্লেষণে অর্থনীতিশাহের অনুসৃত ভর ও মডেলগুলি ব্যবহারেও অত্যন্ত তৎপর।