রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনার মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ কর।
সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য সাধারণ সূত্র বা নিয়মগুলির ভিত্তিতেই মার্কসীয় দর্শনের সৃষ্টি। মানবসমাজের গতিপ্রকৃতি যে সকল সাধারণ নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেগুলি বর্হিজগতের সাধারণ নিয়মের ন্যায় একই রকমের। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞান উদ্দেশ্যমূলকভাবে বহিঃপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ব্যবহার করা যায় এবং হয়। অনুরূপভাবে সমাজকে অধ্যয়নের দ্বারা যে জ্ঞান লাভ করা যায় তাকে সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন বা বিকাশের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। মার্কসবাদ কোন বিমূর্ত নৈতিক সূত্র বা ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবেই এই তত্ত্ব স্বীকৃতি দাবী করে। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সাহায্যে বাস্তব রাজনীতির স্বরূপ সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। তাই এ হল একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
মার্কসবাদ গতিশীল: বিজ্ঞানের অপরাপর শাখার মত মানবসমাজের বিকাশ সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বের সৃষ্টি হয়েছে অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস এবং পৃথিবী সম্পর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে। সেইজন্য তত্ত্ব হিসাবে মার্কসবাদ গতিশীল। এর শেষ সীমারেখা টানা হয়নি। ইতিহাসের অগ্রগতি এবং মানুষের অগ্রগতি এবং মানুষের অধিকতর অভিজ্ঞতা অর্জন মার্কসবাদকে গত সমৃদ্ধ করে। মার্কস ও এ্যঙ্গেলসের মৃত্যুর পর মার্কসবাদকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে লেনিন ও স্তালিনের অবদান উল্লেখযোগ্য। এঙ্গেলের মতানুসারে মার্কসের সমগ্র বিশ্ববিক্ষা একটা বদ্ধ ধারনা নয়, এ হল একটি পদ্ধতি; কতকগুলি অনড় সিদ্ধান্তের সমষ্টি নয়, তা হল অনুসন্ধানের প্রারম্ভিক বিন্দু ও পূর্ণতর অনুসন্ধানের ভিত্তি।
সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধনের উদ্দেশ্য: পরিশেষে স্মরণ করা দরকার যে, মার্কসবাদ নিছক জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিয়ে গবেষণা করে না। মার্কসবাদীদের মূল উদ্দেশ্য হল বর্তমান সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধন। তা ছাড়া মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে মানুষের সমগ্র সামাজিক অস্তিত্বই রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত। মানবসমাজের সকল স্তরে রাজনীতি জড়িত। রাজনীতির আওতার বাইরে মানবজীবনের কোন অংশই থাকতে পারে না।