শিল্প শ্রমিকদের সমস্যা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।
সূচনা বক্তব্য
Introduction শিল্প সম্পর্ক সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিল্পে শান্তি বজায় রাখা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শিল্প সম্পর্ক বিশেষ ভাবে দরকার। মালিক ও শ্রমিক পক্ষ নিয়োগ শর্তাবলী ও কাজের পরিবেশ নিয়ে সম্রষ্ট থাকলে শিল্পে কোন অসন্তোষ থাকে না। ফলে উৎপাদন অব্যাহত থাকে, মাণিক তার আয় পায়, আর শ্রমিকেরা তাদের মজুরি পায়। এমন একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই শিল্প সম্পর্ক কাজ করে। যা হোক, এই পাঠে শিল্প সম্পর্কের প্রাথমিকা যথা সংজ্ঞা, প্রকৃতি, উপাদান, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমে আমরা শিল্প সম্পর্ক বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে জানব।
শিল্প সম্পর্ক বলতে কি বোঝায়?
শিল্প সম্পর্ক বলতে কি বোঝায়?
শিল্প হলো পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মাধ্যম। দেশের সংবিধান, আইন ও বিধি মেনে শিল্পকে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া, শিল্পের সঙ্গে জড়িত পক্ষগণ তথ্য সরকার, উদ্যোক্তা বা মালিক, ব্যবস্থাপকীয় কর্মচারি ও শ্রমিক কর্মচারি মিলেমিশে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করার কাজ করাতে হয়। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থান শিল্পকে আন্তর্জাতিক সংস্থার নীতি-নির্দেশনাও মেনে চলতে হয়। যেমন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মান সংস্থা ইত্যাদির প্রণীত নির্দেশনা মেনে না চললে বিশ্ব বাজারে পণ্য বা সেবা প্রবেশ করতে পারে না।
শিল্প সম্পর্ক হচ্ছে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হলো একটি সংগঠনে কর্মরত মানুষদের ব্যবস্থাপনা করার দর্শন, নীতি, প্রতি ও অনুশীলন সম্পর্কিত সমর্থিত সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে সাংগঠনিক যোগ্যতা ও সক্ষমতা বাড়ে এবং কর্মচারিদের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। এই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ শিল্প সম্পর্ক
রাখার মাধ্যমে শ্রমশক্তি বজায় রাখা। শিল্প সম্পর্ক বলতে শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের পারস্পারিক সম্পর্ক বজার রাখার শাস্ত্রীয় জ্ঞান। শিল্প সম্পর্ক প্রধানতঃ মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে আরও অনেক প্রভাব বিস্তারকারী পক্ষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে সব পক্ষের মধ্যস্থিত পারস্পারিক সম্পর্ককে শিল্প সম্পর্ক বলে অভিহিত করা হয়। শিল্প
সম্পর্কের কোন একক সর্বজনগ্রাহ্য সম্পূর্ণ ধারণা নেই। সে জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রদত্ত শিল্প সম্পর্কের দরকার। তা হলেই হয়তো একটি পূর্ণ ধারণা লাভ করা যাবে। এ লক্ষ্যে শিল্প সম্পর্ক কি এ বিষয়ে কয়েকটি প্রধান সংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হে
শিল্প সম্পর্ক হলো শ্রমিক, ব্যবস্থাপক ও সরকারের মধ্যকার জটিল আত্মসম্পর্ক। ডানলপ (১৯৫৮) (Industrial relations are the complex interrelations among workers, managers and government, শিল্প সম্পর্ক হলো একদিকে রাষ্ট্র ও অন্য দিকে নিয়োগকারী এবং কর্মচারিদের সংগঠনের মধ্যকার সম্পর্ক অথবা পেশাগত সংগঠনদের মধ্যস্থিত সম্পর্ক। আইও। [Industrial Relations are the relationships between the state on the one hand and the employers’ and employees’ organizations on the other or are the relationships among the occupational organizations themselves.] শিল্প সম্পর্কের মধ্যে কার্যক্ষেত্রে ব্যক্তিক সম্পর্ক, কারী কর্মচারিদের মধ্যে যৌথ পরামর্শ, নিয়োগকারীদের বা
তাদের সংগঠনের সাথে ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ সম্পর্ক, এবং এই সব সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত
ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা (২০১০) [Industrial relations include individual relations and joint
কাজের জায়গায় নিয়োগকর্তা এবং কাজের লোকদের মধ্যে পরামর্শ, যৌথ সম্পর্ক
নিয়োগকর্তা বা সংস্থা এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে, এবং রাষ্ট্র দ্বারা অভিনয় করা অংশ
এই সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে।
শিল্প সম্পর্ক বলতে সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র এবং নিয়োগ সংক্রান্ত মানব কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর একটি সমধিক পাঠ বোঝা মन (2000) [Industrial relations denote specialist area of organizational management and study a particular set of phenomena associated with regulating the human activity of employment.]
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো থেকে বলা যায়, শিল্প সম্পর্ক শুধু একটা সাংগঠনিক কাজ নিয়ন্ত্রণকারী বিষয় নয়, এটি বাং বৃহত্তর পরিসরে বিস্তৃত একটি বহুপাক্ষিক সম্পর্ক। এই পক্ষগুলো মধ্যে যেমন মালিক ও শ্রমিক পক্ষ আছে, তেমনই তাদের সংগঠনও আছে। এছাড়া আছে সরকার। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলী ও এনের প্রভাবও বিবেচনার দাবী রাখে। এ জন্য অনেকে মনে করেন, শিল্প সম্পর্ক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সমন্বিত ধারণা। নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে বলা যায়, শিল্প সম্পর্ক হলো শ্রমিক শ্রমিক শ্রমিক মালিক মালিক মালিক শ্রমিক সংগঠন – মালিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক সংগঠন, মালিক সংগঠন মালিক সংগঠন এর মধ্যস্থিত সম্পর্ক এবং এদের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ককে বোঝায়। এই শিল্প সম্পর্ক সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে উদ্ধৃত হয় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শন, নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান দ্বারা চালিত হয়। পরিশেষে বলা যায়, শিল্প- সম্পর্ক একটি বহু শাক্ষিক সম্পর্ক नয় ভিত্তিক জ্ঞান ও মূল্যবোধ দ্বারা চালিত হয় এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়াবলী পক্ষগণের পারস্পারিক সন্তুষ্টি বজায় রেখে শিল্পে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। এবার শিল্প সম্পর্কের প্রকৃতি সম্পর্কে বলব।