সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি কি ? সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি প্রবর্তন এর প্রেক্ষাপট ও মূল নীতিগুলি উল্লেখ করো । এই নীতির কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল

 

সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি । সংজ্ঞা । প্রেক্ষাপট । মূলনীতি । প্রতিক্রিয়া । দ্বাদশ শ্রেণী । দশম শ্রেণী । ইতিহাস সাজেশন

  • সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি  

ব্রিটিশ সরকার ভারতের তাদের শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে হিন্দু-মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালায় । এই জন্য সরকার ভারতের বিভাজন ও শাসন নীতি অনুসরণ করে । সরকারের বিভাজন ও শাসন নীতি কে কার্যকর করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড 1932 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন । তাই এই নীতি কে সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি বলা হয় ।


  • সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির প্রেক্ষাপট :  


1930 খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষেত্রে উভয় সম্প্রদায়ের স্পষ্ট হয়ে ওঠে । গান্ধীজীর নেতৃত্বে 1930 খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে খিলাফত আন্দোলনের দুজন অভিনেতা এবং গান্ধীজীর একসময়কার একান্ত অনুগামী বলে পরিচিত মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর আইন অমান্য আন্দোলন থেকে দূরে থাকেন । 1930 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ের অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেসের আন্দোলন আসলে হিন্দুদের আন্দোলন এবং গান্ধীজির আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিম সম্প্রদায় কে হিন্দু মহাসভার ওপর নির্ভরশীল করে তোলা । এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার 1932 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন । 


আরোও জানতে : উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় । ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (পঞ্চম অধ্যায় ) । দ্বাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর 2023 

 

এই নীতির প্রেক্ষাপট নিচে উল্লেখ করা হলো : 

আইন অমান্য আন্দোলন :  মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস 1930 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আনছারি প্রমুখ জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতা প্রবল উৎসাহে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করলে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকার বিপদে পড়ে যায় । সরকার বাধ্য হয়ে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে লন্ডনে পরপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন ।


প্রথম গোল টেবিল বৈঠক : লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেসের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি যোগদান করে । বৈঠকে উপস্থিত হন জিন্না, আগা খাঁ, মোহাম্মদ রফি, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতারা সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের দাবি জানান । তারা সরকারকে জানিয়ে দেন যে মুসলিমদের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে কোন সংবিধানে মানা হবে না ।


দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক : 1931 খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসের লন্ডনের দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । এই বৈঠকে কংগ্রেসের যোগ দিলেও সরকারি প্ররোচনায় মুসলিম লীগ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে সীমাহীন দাবি জানায় । বলে এই বৈঠক শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং গান্ধীজী শূন্য হাতে ফিরে আসেন ।


তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক : 1932 খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । এই বৈঠকে কংগ্রেসের যোগ না দিয়ে আইন অমান্য আন্দোলনে তীব্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে । সরকারের তীব্র আন্দোলনে সাম্প্রদায়িক ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালায় । জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সরকার 1932 খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন ।


  • সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা  মূলনীতি : 


1. মুসলিম,বৌদ্ধ,ভারতীয়,খ্রিস্টান, ইঙ্গ ভারতীয়, ইউরোপ প্রবৃত্তি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয় । অর্থাৎ এই নীতির দ্বারা মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনের শুধু মুসলিমরা বাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু শিখ সম্প্রদায় নির্বাচিত হওয়ার অধিকার পাবে ।

2. হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু বা দলিত, অস্পৃশ্ব হিন্দু প্রবৃত্তি ভাগে বিভক্ত করেন তাদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় ।

3. কোন কোন নির্বাচন কেন্দ্রে শুধু অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয়  ।


  • সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির প্রতিক্রিয়া 


সরকার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি ঘোষিত হলে ভারতীয় রাজনীতিতে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় 


সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয় : সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতির মাধ্যমে মুসলিম লীগের যাবতীয় সাম্প্রদায়িক দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয় । শুধু বাকি থাকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । বলে আপাতত মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপক ঘোষিত হয় এবং লীগের মানসিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় । অবশ্য জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা সরকারের সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি সমর্থন করেনি ।


গান্ধীজীর অনশন : জাতীয় কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি তীব্র বিরোধিতা করে । গান্ধীজী সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে 20 সেপ্টেম্বর জারবেরা জেলে আমরণ অনশন করলে তার জীবন রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন । এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনার গুরুত্ব না দিয়ে দলিত সম্প্রদায় নেতা বি আর আম্বেদকর এর সঙ্গে আলোচনায় বেশি গুরুত্ব দেন ।


পুনা চুক্তি : সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা পরিপেক্ষিতে দলিত নেতার ডঃ বি আর আম্বেদকর ও গান্ধীজীর মধ্যে আলোচনার পর উভয়ের মধ্যে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।

1. আম্বেদকর ও দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে করেন ওই হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেয়া হয় ।

2. সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা মাধ্যমে তপশিলি সম্প্রদায় যতক্ষণ আসন পেত তার দ্বিগুণ আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত হয় ।


পৃথক পাকিস্তানের দাবি : সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা পর পাকিস্তানের দাবি আরো জোরালো হয় । 1933 খ্রিস্টাব্দে চৌধুরী রহমত আলী ও তার অনুগামীরা ‘এখন অথবা কখনো না’ শীর্ষক 4511 পুস্তিকায় ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত পাঁচটি প্রদেশ — পাঞ্জাব, আফগান প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান নিয়ে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায় । কিছুকাল পরে তিনি পাকিস্তান জাতীয় আন্দোলন শুরু করে এবং প্রস্তাবিত পাকিস্তান ভূখণ্ডে কয়েকটি প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করেন । কিছুকাল পরে 1940 খ্রিস্টাব্দে লীগের লাহোর অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানানো হয় ।


উপসংহার : ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বহুগুণ বৃদ্ধি করে । হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রতি সম্ভাবনা ক্রমে দূরে সরে যায় । এই চূড়ান্ত প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় 1946 খ্রিস্টাব্দে লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ঘোষণা, কলকাতা, নোয়াখালী, ত্রিপুরা, বিহার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য। সাম্প্রদায়িক বিভেদের কারণে ভারত বিভাজন অনিবার্য হয়ে পড়ে । 



আরোও নতুন নতুন সাজেশন ,বিভিন্ন মণীষীদের জীবনী, বাণী, নতুন নতুন সাইরি, উক্তি ইত্যাদি পেতে আমাদের ব্লগার এর সাথে যুক্ত থাকুন : 

                 HELPBANGLA  



Leave a Comment