প্রিয় পাঠক গণ আমরা ইতিহাস বই থাকে ইতিহাসের অনেক কিছু জানতে পারি । আর সেগুলো পড়তে ও জানতে খুবই ইচ্ছা করে । তাই আমি আজ সার্ক সংস্থা সম্পর্কে বলবো । প্রথমত এটা পরীক্ষায় আমাদের আসে তাই তোমাদের সার্ক সংস্থা সম্পর্কে জানা দরকার । আজকের টপিক হচ্ছে ইতিহাসের রচমধর্মী প্রশ্নোত্তর এর মত । আজ আমরা জানবো সার্ক সংস্থা কি বা সার্ক এর সংজ্ঞা । সার্ক প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট । সার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য । এবং সার্ক প্রতিষ্ঠার সমস্যা কি কি ছিল এবং সার্ক এর সাফল্যও গুলো কি কি সেগুলো জানবো।
সার্ক সংস্থা কি বা সংজ্ঞা।প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ।প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। সাফল্য ।
সার্ক সংস্থার সংজ্ঞা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সংস্থা গড়ে ওঠে । এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা যাকে এক কথায় বলা হয় সার্ক । সার্ক এর পুরো কথা বা ফুল ফর্ম হচ্ছে (South Asian association for regional cooperation ) । 1985 সালের ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ গুলিকে নিয়ে সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় । প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় 1985 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে । বর্তমানে সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা হচ্ছে 8 টি ।
1. ভারত
2. বাংলাদেশ
3. পাকিস্তান
4. শ্রীলংকা
5. ভুটান
6. নেপাল
7. মালদ্বীপ
8. আফগানিস্তান
এই আটটি দেশ নিয়ে গড়ে উঠেছে South Asian association for religional cooperation .
সার্ক প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট :
1985 খ্রিস্টাব্দে 8 ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় । সার্ক প্রতিষ্ঠার কি কি প্রেক্ষাপট ছিল তা নিচে দেয়া হলো ।
জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফর : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নিয়ে কোন আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম 1979 খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় । এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান । তিনি 1979 খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজের সক্রিয় উদ্যোগ নেন ।
সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত : দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোকে নিয়ে একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা বিষয়ে ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান নেপাল ভুটান শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রী কন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয় । পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো কাঠমান্ডু ইসলামাবাদ ঢাকা প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন । অবশেষে এসব দেশের বিদেশ মন্ত্রী গনটা 1983 খ্রিস্টাব্দে দিল্লি সম্মেলনের সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ।
সার্কের প্রতিষ্ঠা : জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে 1985 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ গুলোকে নিয়ে সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ।
সার্ক গঠনের উদ্দেশ্য :
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন যে, সাউথ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার সদস্য রাষ্ট্র গুলির আত্মনির্ভরতা সমস্যার সমাধান, দারিদ্র দূরীকরণ, সাক্ষরতার প্রসার, অপুষ্টি ও রোগ দূরীকরণ এর সঙ্গে যুক্ত। সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য রয়েছে ।
সার্ক সংস্থা গঠনের উদ্দেশ্য :
উন্নয়ন : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সামাজিক অগ্রগতি এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো ।
আত্মনির্ভরতা: সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং আত্মনির্ভরতা শক্তি বৃদ্ধি করা ।
উৎসাহ প্রদান: অর্থনৈতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যায় সক্রিয় সহযোগিতার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহিত করা ।
যোগাযোগ বৃদ্ধি : সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে তথ্য আদান প্রদান এবং সেসব দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা ।
জনকল্যাণ : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জনগণের কল্যাণ সাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো ।
সহযোগিতা : সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক কারিগরি বিভিন্ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ।
উন্নয়ন : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির দাঁড়া সার্কের সদস্য গুলির অর্থনৈতিক বিকাশ সামাজিক অগ্রগতি ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটানো ।
বোঝাপড়া: সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়াও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা ।
হস্তক্ষেপ না করা : সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভৌগোলিক অপূর্ণতা রক্ষা করা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা ।
নিরাপত্তা বিধান : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা ।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান: সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা ।
সার্কের সমস্যা গুলি কি কি :
ভারত সম্পর্কে সন্দেহ : বিভিন্ন সময়ে সার্কভুক্ত দেশ গুলির মধ্যে পারস্পারিক অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে । বিশেষ করে ভারত সম্পর্কে প্রতিবেশী ছোট রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে । জনশক্তি অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে বলিয়ান ভারত সম্পর্কে প্রতিবেশী বাংলাদেশ পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা নেপাল প্রভৃতি দেশগুলি সন্দেহ পোষণ করে থাকে । অ্যাডোব অন্তদ্বন্দ্ব স্যারকে শক্তি বৃদ্ধির পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
চীনের সঙ্গে আঁতাত : বাংলাদেশ নেপাল পাকিস্তান প্রতিটি ক্ষুদ্র দেশ গুলির অনেক সময় ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে চীনের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলেছে । ফলের সার্কের সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে।
ভারত-পাকিস্টান সম্পর্ক: সার্কের সাফল্যের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের অস্থির বিরোধপূর্ণ সম্পর্কযুক্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে । কাশ্মীর কে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে বিরোধ ও 1997 খ্রিস্টাব্দে ভারতের কারগিলে পাকসেনা দলের অনুপ্রবেশের ঘটনা দু’দেশের সম্পর্কে যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে । আঞ্চলিক ক্ষেত্রে অধিপত্য বিস্তারিত চেষ্টা সামরিক প্রতিযোগিতা সংঘর্ষ প্রতিটি ঘটনার প্রভাব সার্কের অভ্যন্তরে যথেষ্ট বাধা সৃষ্টি করেছে ।
আরোও পড়ুন ‘ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় । ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (পঞ্চম অধ্যায় ) । দ্বাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর 2023
সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ : ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ সার্কের কার্যকলাপের যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটিয়েছে । তামিল জঙ্গি হানায় শ্রীলংকা রাষ্ট্রপতি প্রেম দাশের মৃত্যু, ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ভারতের পাক আইএসআই-এর গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ 1993 খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই বিস্ফোরণ বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মৌলবাদ প্রবৃত্তি ঘটনা বিভিন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যথেষ্ট প্রভাব বেড়েছে ।
তামিল জঙ্গী সমস্যা : শ্রীলঙ্কায় তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কোন বিরোধ সৃষ্টি করেছে । তামিল জঙ্গিবাদ কার্যকলাপের ঘটনায় শ্রীলংকা সন্দেহ করে যে , এ কার্যকলাপের প্রতি ভারতের হাত রয়েছে । ফলে ভারত-শ্রীলংকার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে । যা পরোক্ষভাবে সার্কের শক্তি দুর্বল করেছে
ভারসাম্য নষ্ট : সার্কের সদস্য ভুক্ত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবধান প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বন্টন প্রবৃত্তি ঘটনা সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করেছে । দুর্বল রাষ্ট্রগুলি ভারতের তুলনায় খুব অনগ্রসর হওয়ায় সার্কের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে ।
মতভেদ : সার্কের কর্মপদ্ধতি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ রয়েছে । এই মতভেদ সার্কের সমস্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছে ।
সহযোগিতার অভাব : সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে অনেক সময় সহযোগিতার অভাবে এর ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং দেশগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে ।
সার্ক সংস্থার সাফল্য গুলি কি কি :
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্কের প্রতিষ্ঠিত নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ । সদস্য রাষ্ট্র গুলির নানাবিধ সমস্যার সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । এতদিন পর্যন্ত সার্কের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিক গুলি হল : ।
1. সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক আদান-প্রদান ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে ।
2. পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের যথেষ্ট সাফল্য এসেছে । এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা খুবই প্রশংসার যোগ্য ।
3. দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ।
4. খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্র গুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
5. শিশুকন্যাদের কল্যাণ এর উদ্দেশ্যে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ।
6. কাঠমান্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে সার্কের কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করা সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।