Help Bangla

Blogs in Bangali

সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। 

ভূমিকা সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের এমন এক ক্ষমতাকে বুঝায় যার ঊর্ধ্বে আর কোন ক্ষমতা নেই। উইলোবির মতে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ইচ্ছাই সার্বভৌমত্ব।” সার্বভৌমত্ব হল রাষ্ট্রের চূড়ান্ত স্থায়ী, অবিভাজ্য, অহস্তান্তরযোগা এবং সার্বজনীন ক্ষমতা। এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আদেশ দান করে এবং প্রয়োজনে হিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বারা আনুগত্য আদায় করে। মধ্যযুগে সার্বভৌমত্বের ধারণা সৃষ্টি হয় এবং আধুনিকযুগে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয়। প্রকৃত সার্বভৌমত্ব, নামমাত্র সার্বভৌমত্ব, বাস্তব সার্বভৌমত্ব, আইনানুমোদিত সার্বভৌমত্ব, আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এগুলি সার্বভৌমত্বের বিভিন্নমুখী প্রকাশ। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের সার্বভৌমত্ব কথাটি সকলের নিকট পরিচিত। জনগণই শাসক নির্বাচন করে, শাসক পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজনে উৎখাত করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেহেতু জনগণের শাসন সেহেতু রাষ্ট্রীয় সকল ব্যবস্থার নাগরিকদের অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনগণের নিকট শাসকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই ইউনিটে সার্বভৌমত্ব কাকে বলে, এর বিভিন্ন রূপ, এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব, মতবাদ এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

১০.১.১ সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা

সার্বভৌমত্ব বা সার্বভৌমিকতা (Sovereignty) বলতে রাষ্ট্রের এমন এক ক্ষমতাকে বুঝায় যার উর্ধ্বে

আর কোন ক্ষমতা নাই। অর্থাৎ রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাই সার্বভৌমত্ব। এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র সমস্ত

ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের সংঘ ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা দিয়ে জ্যাঁ বোদা বলেন, “এটি নাগরিক ও প্রজাদের উপর আরোপিত এমন সীমাহীন ক্ষমতা যা আইনের দ্বারা বাধাগ্রস্ত নয়। ” অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব এমন এক ক্ষমতা যা আইনের উর্ধ্বে। উইলোবি বলেন, “রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ইচ্ছাই সার্বভৌমত্ব।” অধ্যাপক বার্জেস বলেন, “প্রত্যেক প্রথা ও সংঘের উপর মৌলিক, চরম ও সীমাহীন ক্ষমতাকে সার্বভৌমত্ব বলে।” সার্বভৌমত্বের একত্ববাদের সমর্থক জান অধিন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন, “যদি কোন সুনির্দিষ্ট উচ্চ মাননী কর্তৃপক্ষ অনুরূপ কোন কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে অভ্যস্ত না হন বরং সমাজের অধিকাংশ 

জনগণের নিকট থেকে স্বভাবজাত আনুগত্য লাভ করেন তবে সেই নির্দিষ্ট উচ্চ কর্তৃপক্ষ সেই সমাজে সার্বভৌম এবং উক্ত সার্বভৌমকে নিয়ে গঠিত সমাজ হল রাজনৈতিক ও স্বাধীন।”

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত, স্থায়ী, অবিভাজ্য, আহারযোগ্য এবং সার্বজনীন ক্ষমতা। এ ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র তার অধীন সকলকে আদেশ ও নির্দেশ দান করে এবং সকলের নিকট হতে আনুগত্য লাভ করে।

১০.১.২ সার্বভৌমত্বের ধারণার বিকাশ

প্রাচীন কালে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা পরিষ্কারভাবে লক্ষ করা যায় না। সার্বভৌমত্বের ধারণা মধ্যযুগে আত্মপ্রকাশ করে এবং আধুনিক যুগের শুরুতে পরিপূর্ণতা অর্জন করে। মধ্যযুগে ইউরোপে রাজা ও পোপের লড়াইয়ে রাজা জয়ী হলে বণিকগণ তাদের ব্যবসায়ের নিরাপত্তার জন্য রাজার প্রতি আনুগতা দিতে আরম্ভ করে, ফলে রাজার শক্তি বৃদ্ধি হয়। নবজাগরণের ফলে সাম্রাজ্যের পরিবর্তে রাজাদের কর্তৃত্বে বেশ কয়েকটি জাতীয় রাষ্ট্রের সূচনা হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে টিউডর রাজবংশ, স্পেনে পঞ্চম চার্লস এবং ফ্রান্সে চতুর্দশ লুই এর কর্তৃত্বাধীনে চরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে এ সময়ে রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠে। তবে ঐ সময়ে সার্বভৌমত্ব বলতে শাসক বা রাজার চরম ক্ষমতাকে মনে করা হত। পরবর্তীতে লক ও রুশোর লেখনীতে যথাক্রমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ও গণসার্বভৌমত্বের ধারণা বিকশিত হয়। আধুনিককালে সার্বভৌমত্ব আর রাজার বা কোন ব্যক্তির অসীম ক্ষমতা নয়, বরং এটি জনগণের চরম ক্ষমতা যা রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীনে থেকে সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়।

১০.১.৩ সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য

সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :

(১) চরম ও চূড়ান্ত- সার্বভৌমত্ব হল চরম ক্ষমতা। কারণ রাষ্ট্রের এ ক্ষমতার ঊর্ধ্বে আর কোন ক্ষমতা থাকে না। এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র এর অভ্যন্তরস্থ সকল ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রের আদেশ ও নির্দেশ সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। কোন ক্ষমতাই রাষ্ট্রের এই ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

(২) স্থায়ীত্ব- সার্বভৌমত্ব চিরস্থায়ী ক্ষমতা। রাষ্ট্র যতদিন থাকবে ততদিন এ ক্ষমতা বহাল থাকবে। শাসকের পরিবর্তন হলেও সার্বভৌম ক্ষমতার কোন হেরফের হয় না বা কোন পরিবর্তন হয় না।

(৩) অবিভাজ্য- সার্বভৌমত্ব একক ও অভিন্ন। একে বিভক্ত করে বিভিন্ন হস্তে ন্যস্ত করা যায় না। বিভক্ত করলে সার্বভৌমত্বের বিনাশ ঘটে।

(৪) অহস্তান্তরযোগ্য- সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরযোগ্য নয়। একে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের হস্তান্তরের অর্থ সেই রাষ্ট্রের মৃত্যু হওয়া।

(৫) সার্বজনীন ও শাশ্বত সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সর্বব্যাপী ও চিরন্তন ক্ষমতা। রাষ্ট্রের সকল সংস্থা এর অধীন। এ ক্ষমতা চির অটুট। রাষ্ট্র থাকলে সার্বভৌমত্ব থাকবে। রাষ্ট্রের বিনাশ না হলে এর বিনাশ হয়।

১০.১.৪ সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ সার্বভৌমত্বকে প্রধানত তিনটি অবয়বে মোট ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা

হল : (ক) অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব- অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতাকে বুঝায়। যা দ্বারা রাষ্ট্র রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রপ্রণীত আইনের প্রতি এ ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র আনুগত্য আদায় করে। আইন লঙ্ঘনের জন্য এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র চরম দণ্ডবিধান করে থাকে। 

বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব বলে রাষ্ট্র নিজ রক্ষা ও অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাধীনভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে। এ

ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকে এবং স্বাধীনভাবে সামরিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও

সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারে।

অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব একই সার্বভৌমত্বের দ্বিমুখী প্রকাশ মাত্র, সার্বভৌমত্বের দুটি ধরন

(খ) নামসর্বস্ব ও কার্যকর সার্বভৌমত্ব যখন সার্বভৌম ক্ষমতা কোন ব্যক্তির নামে পরিচালিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তার কোন ক্ষমতা থাকে না তখন তাকে নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব বলে। যেমন বৃটেনের রাজার নামে সার্বভৌমত্ব থাকলেও রাজা কোন কার্যকর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না। তাই বলা হয়ে থাকে যে, রাজা রাজত্ব করে। রূপ সার্বভৌমত্বকে নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব বলা হয়। অপরপক্ষে বাস্তবে যার দ্বারা সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটে তাকে কার্যকর সার্বভৌম বলে। যেমন বৃটেনের মন্ত্রীসভা প্রকৃত সার্বভৌম। কেননা বৃটেনের আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত বৃটিশ মন্ত্রীসভার কোন সিদ্ধান্তকে রাজা অগ্রাহ্য করতে পারে

(গ) আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব- কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটলে তাকে আইনগত সার্বভৌমত্ব বলে। মাইনের মাধ্যমে যে চরম ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে তাই আইনগত সার্বভৌমত্ব। এই আইনের দ্বারা ঘোষিত আদেশ কেউ অমান্য করতে পারে না। বৃটেনের রাজা সমেত পার্লামেন্ট এরূপ সার্বভৌমত্বের উদাহরণ। ইংল্যাতে এমন কোন আইন নেই যা পার্লামেন্ট পাস বা বাতিল করতে পারে না এবং এমন কোন কর্তৃপক্ষ নেই যা পার্লামেন্ট বাণীর আইনকে বলবৎ করতে অস্বীকার করতে পারে।

অপরপক্ষে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব বলতে আইনগত সার্বভৌমত্বের পিছনে অবস্থানকারী সেই কর্তৃপক্ষকে বুঝায় যার কর্তৃত্বকে চূড়ান্ত পর্যায়ে আইনগত সার্বভৌমত্ব আনুগত্য নিতে বাধ্য। এটি অগত প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন জনমত যা রাষ্ট্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। একে জনগণের সার্বভৌমত্ব বলে। নির্বাচক মণ্ডলীর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেজন্য নির্বাচকমণ্ডলীর ক্ষমতাকে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব বলে। সাধারণভাবে জনমত আকারে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতিফলন

Updated: July 25, 2022 — 4:27 am

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Help Bangla © 2023 Frontier Theme