Help Bangla

Blogs in Bangali

সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণ গুলি লেখ? সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কি ছিল? সুয়েজ সংকট এর গুরুত্ব ও ফলাফল গুলি উল্লেখ কর

সূচনা : মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজি ফরাসিদের নিয়োগে খনন করা হয় একটি খাল যার নাম হল সুয়েজ খাল। 1859 খ্রিস্টাব্দে সে খাল খনন শুরু হলেও 1869 থেকে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কম্পানি নামে এক সংঘরশ তাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে 99 বছরের মেয়াদে খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় । কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে 1956 খ্রিস্টাব্দে 26 জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবেদল নাসের এক ঘোষণার মাধ্যমে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কম্পানি দুটি কে জাতীয়করণ করে নেন । ফলে সুয়েজ খাল কে কেন্দ্র করে এক সমস্যা তৈরি হয় । গোটা পৃথিবী জুড়ে সুয়েজ খালের এই সমস্যাকে সুয়েজ খাল সংকট নামে ব্যাখ্যা করেন ।

সুয়েজ খাল সংকটের কারণ 

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব ইজরায়েল দন্ত চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরাইলকে অস্ত্র সরবরাহে সিদ্ধান্ত নিলে আরবদেশগুলো ক্ষুব্ধ হয় এবং নাচের সঙ্গে ও পাশ্চাত্য দেশ গুলি একটু মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন মন্ত্রী ডালের সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ গুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখন ও ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। পরবর্তীকালে জাতিপুঞ্জের মিশর প্রস্তাব তুলে ধরলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। জানা নাসের এর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না ।

আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প : নাসের চেয়েছিল মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীল নদের ওপর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে । কেননা এই বাদে সাহায্যে 8 লক্ষ 60 হাজার হেক্টর জমিতে জল শেচ করে সেগুলি জমিতে পরিণত করা হবে। আবার এবাদত জলাধার থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তার শিল্প উন্নয়নে সাহায্য করবে। এই নির্মাণ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছিল এক 1400 মিলিয়ন ডলার। ইংল্যান্ড,আমেরিকা,বিশ্বব্যাংক মিলিতভাবে এ প্রকল্পের জন্য 70 মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। কিন্তু এক বছর আলোচনা চলার পর আমেরিকা-বৃটেনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে দিলে নাসের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় বা রেগে যায়।

নাসিরের পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব: নাসের কখনোই চাননি মিশরে ইংল্যান্ডের সৈন্যরা অবস্থান করুক। হাটহাজারী তিনি ইংল্যান্ডকে চাপে রাখার জন্য সামরিক শক্তির সাহায্য জরুরি বলে মনে করেন। তাদের কি অবস্থা লক্ষ্যে তিনি এক সঙ্গে জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করেন ইঙ্গ-মার্কিন গুষ্টির বিরোধিতা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি কমিউনিস্ট চীনকে স্বীকৃতি জানান । নাসের কে আচরণে ক্ষুব্ধ হয় ব্রিটেন ফ্রান্স।

সুয়েজ খাল জাতীয়করণ: ক্ষুব্ধ নাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি চাকরি করেন এবং ঘোষণা করেন যে  : 

1. এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ খরচ করা হবে

2. কোম্পানির বিদেশিদের প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে 

3. আন্তর্জাতিক যোগ সূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপদ ব্যবহার করতে পারবে।

সুয়েজ খাল সংকট এর গুরুত্ব ও ফলাফল : 

আরব দুনিয়ার পশ্চিমী বিদ্বেষ : প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ইজরায়েল কে সাহায্য করেছিল। এমতাবস্তায় সুয়েজ সংকট কে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ-ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিসরসহ গোটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিমী বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়।

সুদৃঢ় আরব ঐক্য: পশ্চিম-বিরোধী মনোভাব আরবদের আরও সংহত করে তোলে। তাদের ঐক্য আরও দৃঢ় হয়। মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত হয় ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’। নাসের হন তার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

নাসেরের জনপ্রিয়তা: আরব জাতীয়তাবাদ শেষপর্যন্ত জয়যুক্ত হলে নাসেরের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আরবদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা শীর্ষে পৌঁছোয়। আরব জাতীয়তাবাদীদের কাছে নাসের বীরের সম্মান লাভ করেন। তিনি ‘আধুনিক সালাদিন’ উপাধিতে ভূষিত হন। মিশর ও সিরিয়া—দুটি দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৫৮ খ্রি. সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র (UAR) গঠিত হয়। এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন নাসের। নাসের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হন।

 

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মর্যাদা হ্রাস: সুয়েজ সংকটের পরিণতিতে যে দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব বাঁধে তার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে। ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা হ্রাস পায়। খোদ ব্রিটেনেই বিরোধিতার জেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি ইডেন ১৯৫৭ খ্রি. ৯ জানুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফরাসি উপনিবেশ আলজেরিয়ায় ফ্রান্স-বিরোধী মুক্তিসংগ্রাম তীব্র রূপ ধারণ করে এবং শেষপর্যন্ত আলজেরিয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়।

সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা :  

1. প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে: সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে নিজস্বার্থেই ভারত সুয়েজ সমস্যা (১৯৫৬ খ্রি.) সমাধানে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারত মনে করত ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ‘কনস্ট্যান্টিনোপল কনভেনশন’ অনুসারে সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে সেই সঙ্গে সে এ-ও মনে করত যে, খাল ব্যবহারকারীদের একটি উপদেষ্টামূলক ভূমিকা থাকা দরকার।

2.বিদেশমন্ত্রীর মাধ্যমে: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুয়েজ সমস্যার সমাধানে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনো প্রতিনিধি যোগদান না করায় ভারতের প্রতিনিধি বিদেশমন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন দু-পক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কৃষ্ণ মেনন পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন। তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে এক কমিটি গঠন করে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। তিনি মিশরের ওপরও খাল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।

3.  প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে: ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্ররোচনায় মিশরের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণকে ভারত সরকার কঠোরভাবে নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটিকে এক ‘নগ্ন আক্রমণ’ বলে নিন্দা করেন।

4. জাতিপুঞ্জে যোগদান: জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী হিসেবে ভারত মিশরে সেনা পাঠায়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণের বিষয়ে জাতিপুঞ্জে আলাপ-আলোচনাকালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Updated: July 5, 2022 — 4:15 pm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Help Bangla © 2023 Frontier Theme