Help Bangla

Blogs in Bangali

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।। হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কিরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ।। উডের নিদের্শনামা।

 

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।। হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কিরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ।। উডের নিদের্শনামা।

প্রশ্ন : স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ।

   স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কার আদর্শ ব্যাখ্যা

নব্য বেদান্তের প্রচারক : স্বামীজির ধর্মীয় চিন্তাধারার গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ‘নব্য বেদান্তবাদ’। বিবেকানন্দ প্রাচীন অদ্বৈত দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে এটিকে জনপ্রিয় ছিলেন। করে তোলেন। কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, ধনী-দরিদ্রের প্রভেদ দূর করে তিনি জাতিকে ঐক্য ও কর্মশক্তিতে উদ্দীপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর নব্য বেদান্তের অভিমুখ ছিল—জগতের কল্যাণেই নিজের মোক্ষ লাভ

জীবসেবার আদর্শ : তাঁর ধর্মদর্শনে “শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর দীক্ষা—“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” বিশ্ব ভ্রাতৃত্বো আদর্শ প্রচারক : ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে ভারতের আধ্যাত্মিকতার সনাতন স্বরূপ তিনি বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরেন। বেদান্তের নতুন ব্যাখ্যা এবং তার সহায়ক উপাদানরূপে কর্মযোগের প্রচার করে বিশ্ববাসীকে সন্ধান তিনি দিয়েছেন। তাঁর মতে, যুদ্ধ ও ধ্বংসের পরিবর্তে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই সমৃদ্ধির একমাত্র পথ।

মানুষ গড়ার ধর্ম : স্বামীজির কাছে ‘ধর্ম’ কেবলমাত্র আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির সমষ্টিমাত্র নয়, ‘ধর্ম’ তাঁর কাছে মানুষ গড়ার হাতিয়ার। যে ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, সেই ধর্মকে তিনি গ্রহণ করেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভেদহীন সনাতন মানবধর্মের জয়গান তিনি গেয়েছেন।

আরোও পড়ুন ”-ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় রচনাধর্মীপ্রশ্নপত্র 2023 ।।বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’-এর কীরূপ ভূমিকা ছিল 

আরোও পড়ুন ”-দ্বাদশ শ্রেণী ইতিহাস বিষয়ের অধ্যায় ভিত্তিক সাজেশন 2022

প্রশ্ন : হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কিরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ? 

উত্তর : উনিশ শতকের বাংলার অবক্ষয়িত সমাজের এক জীবন্ত পটচিত্র ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা। 

              হুতোম প্যাঁচার নকশা কি 

লেখক : সাহিত্যসেবী কালিপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতোম’ ছদ্মনামের আড়ালে এই প্রহসনটি রচনা করেন।

প্রকাশঃ ১৮৬২-তে গ্রন্থটির প্রথমভাগ ও ১৮৬৩-তে গ্রন্থটির দ্বিতীয়ভাগ এবং সর্বোপরি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা।

হুতোম প্যাঁচার নকশা’ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার বাবু কালচার এবং বাংলার অবক্ষয়িত সমাজ জীবনের এক অসাধারণ ও জীবন্ত দলিল। গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে সমকালীন কলকাতার সমাজ জীবনের দুর্নীতি, কপটতা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে শাণিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। বাবু সমাজের গণিকাবিলাস, ভ্রুণ হত্যা, বিবিধ মাদক দ্রব্যের ব্যাপক আয়োজনকে ব্যঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা, চরক, রথ, স্নান যাত্রা প্রভৃতির নামে হিন্দু সমাজের ভণ্ডামি ও ভাঁড়ামির সমালোচনা করা হয়েছে। যেখানেই তিনি ভণ্ডামি দেখেছেন, সেখানেই তিনি বিদ্রুপ-বাণ বর্ষণ করেছেন। সমাজচেতনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কষাঘাত, হাস্যরস সবমিলিয়ে এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য গ্রন্থ। তাঁর আর এক বড়ো কৃতিত্ব হল, এই প্রথম সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলাকে সংস্কৃত শব্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাকে কথ্য ভাষায় হাজির করেছেন। ‘হুতোম’-এর চলিত ভাষা ব্যবহারের নৈপুণ্য পাঠককে মুগ্ধ করে।

মন্তব্য :লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-কে কালোত্তীর্ণ করেছে। ভাষা-ভঙ্গি ও রঙ্গ মিলিয়ে গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে ‘সরস, মিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী’।   

প্রশ্ন : নীলদর্পণ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

 উত্তর- উনিশ শতকের বাংলার নিপীড়িত কৃষক সমাজের এক জীবন্ত নাট্য দলিল দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’।

প্রেক্ষাপট : বাংলার নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচার ও নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে কোম্পানির কর্মচারী দীনবন্ধু মিত্র ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘কস্যচিৎ পথিকস্য’ (জনৈক পথিক) ছদ্মনামের আড়ালে রচনা করেন ‘নীলদর্পণ’।

সমাজচিত্র : নীলচাষ এবং নীলকরদের অত্যাচারে বাংলার সমাজ জীবনে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তার অশ্রুসজল কাহিনি ‘নীলদর্পণ’-এ পরিবেশিত হয়েছে। অত্যাচারী নীলকর উড সাহেবের চরিত্র চিত্রণের মধ্য দিয়ে নাট্যকার নীলকরদের অত্যাচার, দমন-পীড়নের বাস্তব চিত্র অঙ্কন করেছেন। নীলকররা ছলে-বলে-কৌশলে দরিদ্র প্রজাকে কিছু টাকা দাঁদন দিয়ে তাকে নীলচাষে এবং উৎপন্ন নীল নীলকরদের কাছে বিনা লাভে বিক্রি করতে বাধ্য করত। প্রহার, বলপূর্বক আটক, গৃহদাহ, কৃষিসরঞ্জাম বাজেয়াপ্তকরণ, স্ত্রী-কন্যা অপহরণ, লাঞ্ছনা প্রভৃতি ছিল নীলচাষিদের নিত্যপ্রাপ্তি। এসবের বিরুদ্ধে তারা একজোট হয়েছিল। তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদের ভাষাই ধরা পড়েছে এই নাটকে। সাধুচরণ, ক্ষেত্রমণি, তোরাপ, আদুরি প্রমুখ শ্রমজীবী চরিত্ররা হয়ে উঠেছে নীলকর বিরোধী আন্দোলনের প্রতিভূত।

ভাষান্তর : নীলচাষিদের করুণ কাহিনি শ্বেতাঙ্গ সমাজের কাছে তুলে ধরতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত গোপনে এর ইংরেজি অনুবাদ করেন। রেভারেন্ড জেমস লঙ নামক জনৈক ভারত প্রেমিক খ্রিস্টান পাদ্রী “The Indigo-Planting Mirror শিরোনামে এই অনুবাদটি প্রকাশ করেন। কিন্তু স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় নীলকররা লঙ্ সাহেবের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করে। মামলায় পরাজিত লঙ্ সাহেবের এক মাসের কারাদন্ড ও হাজার টাকা জরিমানা হয়।

টীকা লেখো : উডের নিদের্শনামা। 

উত্তর : কোম্পানির বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড় ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে যে শিক্ষা

উডের নিদের্শনামা সম্পর্কে টীকা লেখ

সংক্রান্ত নির্দেশনামা জারি করেন, তা উড়ের নির্দেশনামা’ বা ‘উডস ডেসপ্যাচ’ নামে পরিচিত। লক্ষ্যঃ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার এবং ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়মতান্ত্রিক ও সুসংঘবদ্ধরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই উডের ডেসপ্যাচ ঘোষিত হয়েছিল।


 উডের নির্দেশনামায় সুপারিশ সমূহঃ

(i) একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা বিভাগ স্থাপন ।

(ii) প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা।

(iii) প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ।

(iv) শিক্ষক-শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ।

(v) বিদ্যালয়গুলির জন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি ।

(vi) ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন পদ সৃষ্টি 

 (vii) নারী শিক্ষার প্রসার

(viii) সাধারণ বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার ব্যবহার

(ix) মেধাবৃত্তি দান প্রভৃতির কথা বলা হয়। ফলাফলঃ উডের সুপারিশ অনুযায়ী—

(i) প্রথমে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে এবং পরে লাহোর ও এলাহাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। 

(ii) সর্বমোট একশো চল্লিশটি মধ্য-ইংরেজি বিদ্যালয় ও ৭৯টি পূর্ণ-ইংরেজি বিদ্যালয়কে সরকারী অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

উত্তর : প্রথমে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ সরকার যে দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করেছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা ও আধিপত্য সুদৃঢ় করা। ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ এবং ভারতে রেলপথ বিস্তারের লক্ষ্যে কাঠের স্লিপার তৈরির জন্য ভারতের বনজ সম্পদের ওপর ঔপনিবেশিক সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল।

ভারতের সুবিস্তৃত বনাঞ্চলের জমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্য যেমন ছিল, তেমনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্ত করে তোলার তাগিদ ছিল।

ব্রিটিশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষিজমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা।

এটাও ঠিক যে, ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ অরণ্য—এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার, জীবন-জীবিকার মূলে কুঠারঘাত করা হয়েছিল এবং যার ফলে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ। 

Updated: March 27, 2022 — 6:10 pm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Help Bangla © 2023 Frontier Theme